Mostafa Kamal Majumder
মোস্তফা কামাল মজুমদার
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কেন মানুষের মধ্যে সবার চেয়ে বেশী জনপ্রিয়? এ প্রশ্নের একটাই জবাব। তিনি জনগনের লোক এবং তাদের নেতা ছিলেন। যা কিছুই করেছেন তা ছিল জনগনের জন্য। নিজের জন্য তেমন কিছুই না। এমন কি নিজের পরিবারের জন্যও না। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষক। দেশ গড়ার কারিগর। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতীক। ব্যক্তিগত জীবনে অতি সাধারণ হয়েও জাতীয় জীবনে অসাধারণ। তার কারিসমার এই পরিধি যত দিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে। তিনি যুব সমাজের কাছে আদর্শ। তার সততা, ন্যায়পরায়নতা প্রশ্নাতিত। যখন নিয়তি তাকে দেশের দায়িত্ব গ্রহণের স্থানে নিয়ে আসে তখন তিনি সবার কাছে প্রিয় সেনানায়ক। কোন সংগঠন ছিলনা তাঁর। একমাত্র পুঁজি জনগনের ভালবাসা। যেদিকেই গেছেন সবাইকে জয় করে নিয়েছেন। ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দুতে আসার পর চারিদিক থেকে বলা শুরু হয়, তিনি শোনেন বেশী বলেন কম।
জিয়াউর রহমান যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে প্রথমবারের মত যান শিক্ষকদের সাথে মতবিনিময় করতে, তখন বেগম রোকেয়া হলের দিকটায় জড়ো হওয়া কিছু ছাত্র তার বিরুদ্ধে শ্লোগান দিচ্ছিল। তিনি জীপ থেকে নেমে ছাত্রদের আহবান জানালেন কথা বলতে। ছাত্ররা কেউ কেউ ঢিল ছুঁড়েছিল। অন্যরা স্থান ত্যাগ করে। কিন্ত জিয়ার কথা বলার আহবান ছাত্রদের মন জয় করে নেয়। তার জীবদ্দশাতেই তার গড়া জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে চলে আসে। টিএসসির ভেতরে শিক্ষকদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে বেশী সমালোচনমূলক বক্তব্য দেন তিনি জিয়ার আহবানে তার দল বিএনপিতে যোগ দেন। অন্য কেউ নয়, সয়ং ড: খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এখন স্থায়ী কমিটির সবচেয়ে সিনিয়র সদস্য।
বাংলাদেশের মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর স্নেহধন্য জিয়াউর রহমান ভাসানী ন্যাপের অনেক নেতাকে তার দল বিএনপিতে আকর্ষিত করতে পেরেছিলেন। এমনকি বিএনপির ধানের শীষও এক সময় মওলানা ভাসানীর মার্কা ছিল। অল্প যে কয় মাস মওলানা ভাসানী জিয়াউর রহমানের কাজ পরখ করেন তার মধ্যেই তিনি তাঁর অনুসারীদের বলেন জিয়াকে সমর্থন করতে। কারণ হিসেবে উল্লেখ করে গেছেন তার সততা ও ন্যায়নিষ্ঠার কথা। জানা যায়, মওলানা হুজুর অনুসারীদের বলেন, তোমরা দেখ তার আশপাশে কোন আত্মীয়ের সমাগম নেই। তিনি দেশের জন্য কিছু করে যেতে পারবেন।
ন্যাপ ভাসানীর নেতা মতিউর রহমান যাদু মিয়া শুরুর দিকে জিয়াউর রহমানকে কিছুটা সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখতেন। ৩০ মে ১৯৭৭ সালে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট জিয়ার উপর মানুষের আস্থার হাঁ, না ভোট তিনি সমর্থন করেননি। জাতীয় তিন নেতার মাজার প্রাঙ্গনে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দির উপর আয়োজিত এক স্মরণ সভায় ভাইস প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবদুস সাত্তার ও ইত্তেফাক সভাপতি মন্ডলীর সভাপতি ব্যারিষ্টার মঈনুল হোসেনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, সংবিধান বলছে দেশের মালিক জনগণ। আর আপনারা ভোটের মাধ্যমে বলে দিলেন, দেশের মালিক জিয়াউর রহমান। বিচারপতি সাত্তার ও ব্যারিষ্টার মঈনুল এ কথা মেনে নেননি, আবার কোন জবাবও দেননি।
অল্প কিছুদিন পর একদিন মসিউর রহমান জাদু মিয়া তখনকার সরকারী পত্রিকা বাংলাদেশ টাইমসের অফিসে গিয়ে হাজির। সেখানে এক সময়ের ন্যাপ নেতা আনোয়ার জাহীদ বার্তা সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন, সম্পাদক এনায়েতুললাহ খানের নিয়োগে। যাক, যাদু ভাই রিপোর্টিং সেকশনেই বসে জিয়াউর রহমানের সাথে বংগ ভবনে বৈঠকের উদ্ধৃতি দিয়ে তার ভূয়সী প্রশংসা করলেন।
বংগ ভবনে বৈঠকের পর জিয়া তাকে লাঞ্চে আমন্ত্রন করেন। ডাইনিং রুমে গিয়ে তার আককেল গুড়ুম। রাষ্ট্রপতি জিয়া তার বাসা থেকে টিফিন ক্যারিয়ারে নিয়ে আসা খাবার জাদু ভাইকে নিয়ে খেলেন। মেনু - ভাজি, কই মাছের তরকারি এবং ডাল। মসিউর রহমান জাদু মিয়া বললেন, এ লোক সাধারণ মানুষ নয়। তার উপর আস্থা রাখা যায়।
জাদু ভাই পরে বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁকে জিয়াউর রহমান সিনিয়র মন্ত্রী বানিয়ছিলেন। ১৯৭৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হবার অল্প কয়েকদিন পর ১২ মার্চ জাদু মিয়া মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে পিজি হাসপাতালে কয়েকদিন শয্যাশায়ী থেকে মৃত্যু বরণ করেন।
ঢাকার খ্যাতনামা মাজেদ সরদার রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে বালুবাজার এলাকায় এক জনসমাবেশে বুড়িগংগার উপর সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করেন। জিয়া তা সমর্থন করে এ সেতুর কাজ শুরুর নির্দেশ দেন। মাজেদ সরদার উপস্থিত জনতার কাছে জিয়াউর রহমানকে উপস্থাপন করেন এই বলে। জীবনে আমি অনেক লোক দেখেছি। "জিয়াউর রহমান পোলাডা বালা"। সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের ভালবাসায় ধন্য জিয়ার ক্যারিসমা তার প্রতিষ্ঠিত দল - বিএনপি যা মানুষের অধিকার তথা গনতন্ত্রের কথা বলে; স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের কথা বলে।
(লেখক, গবেষক, সম্পাদক, সাংবাদিকতার শিক্ষক ও প্রশিক্ষক , মোস্তফা কামাল মজুমদার বর্তমানে গ্রীন ওয়াচ ঢাকা অনলাইন পত্রিকা সম্পাদনা করছেন।}