News update
  • No need to be kind to election disruptors: EC to law enforcers     |     
  • No Media Faced Arson Attacks in 53 Years: Mahfuz Anam     |     
  • Janaza of six Bangladeshi peacekeepers held at Dhaka Cantonment     |     
  • Bangladesh stock market loses Tk 10,500cr in a week     |     
  • Dhaka’s air turns ‘very unhealthy’ on Sunday morning     |     

কাকের মাংস কাকে খায়না!

মতামত 2023-09-29, 10:19pm

mostafa-kamal-majumder-2-619235724d706347cc6c55036dfd39341696004350.jpg

Mostafa Kamal Majumder



মোস্তফা কামাল মজুমদার

প্রবাদে আছে কাকের মাংস কাকে খায়না। প্রবাদ কখনো মিত্থাশ্রয়ী নয়। কিন্তু তাকে ভুল প্রমান করতে উঠে পড়ে লেগেছেন আমাদের দেশের কিছু মানুষ। মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টির অনেক অমানবিক সূত্র মানুষই যুগে যুগে প্রত্যাক্ষান করে সভ্যতাকে এতদূর এগিয়ে এনেছে। জাতি, গোষ্ঠি, বর্ণ ও ধর্মের বিভেদ ও বৈষম্যের কথা আধুনিক সভ্য মানুষ মানেনা। তবে রাজনৈতিক বিভেদ আছে এবং থাকবে। এটা সভ্য সমাজে সবাই মেনে নিয়েছে। কিন্তু এই বিভেদ বৈষম্যের কারণ হতে পারেনা।

সমাজে, রাষ্ট্রে মানুষের মধ্যে মতের পার্থক্য থাকাটাই স্বাভাবিক। একই মা-বাবার দুই শিশু সন্তান এক ধাঁচের হয়না। খাবার, পুতুল-খেলা, বেড়াতে যাওয়া, টিভি প্রোগ্রাম বা ভিডিও গেমের ব্যাপারে পছন্দের বৈপরিত্য নিয়ে অনেক সময় তাদের মধ্যে ঝগড়া বেঁধে যায়। কিন্তু পরিবারের ছত্র-ছায়ায় তারা এক ও অভিন্ন। একজনের দুঃখে আরেকজন কাঁদে, আনন্দে আরেকজন হাঁসে। সমাজ ও রাষ্ট্র আমাদের বৃহত্তর পরিবার। নিজ নিজ মতপার্থক্য নিয়ে বড় একটা ছাতার নীচে সামগ্রিক ঐক্যের মধ্যে আমাদের বসবাস। এটাই হল বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য। যা হচ্ছে সমাজের প্রানশক্তি।

যারা রাজনৈতিক মতভেদ মেনে নিতে চাননা, তারা সম্ভবতঃ ক্ষণিকের উত্তেজনায় বুঝতে পারেননা তারা আসলে কি চান। তারা কি ভুলে যেতে চান সবার জানা ফরাসি দার্শনিক ভন্টায়ারের অমর বাণী - আমি তোমার কথার সাথে একমত নই, কিন্তু তোমার এই ভিন্নমত প্রকাশের অধিকারটুকু আমার জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করবো। ফরাসি বিপ্লবের মূলমন্ত্র - স্বাধীনতা (লিবার্টি), সাম্য (ইকিউয়ালিটি) এবং মৈত্রী (ফ্রেটারনিটি) - গণতন্ত্রের চিন্তাধারাকে অনেক শক্তিশালী করেছে। অন্যের মতের প্রতি সহনশীল না হলে অন্যেরা এই অসহনশীলতা মেনে নেবে এটা মনে করার কোন কারণ নেই। আর অন্যের মতের প্রতি অসহনশীল কথা বলে ও কাজ করে নিজেকে গণতন্ত্রী বলে জাহীর করার চেষ্টাও নিরর্থক। 

বাংলাদেশে সাংবাদিকতা পেশার একাংশের নেতারা নিজেদের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বলে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। বেশ ভাল কথা। এদেশের সাংবাদিক ইউনিয়ন আন্দোলনে সবসময়ই দুইটি ফোরাম একে অন্যের সাথে বিভিন্ন নির্বাচনে লড়াই করেছে। ইউনিয়নে কারো একচ্ছত্র আধিপত্য কখনো ছিলনা। নেতাকর্মীদের এক ফোরাম থেকে অন্য ফোরামে যাওয়া ছিল নৈমিত্তিক ব্যাপার। এক মেয়াদে কোন এক ফোরাম জিতলে অন্য ফোরাম অন্য মেয়াদে জিতেছে। এভাবে ভালই চলছিল। কিন্তু এই দুই ফোরাম দূর্ভাগ্যক্রমে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সফলতার পর দুইটি আলাদা ইউনিয়নে বিভক্ত হয়ে যায়। এর পেছনে একটাই কারণ ছিল। আর তা হচ্ছে নেতৃত্বের কোন্দল। যে দুইজনের মধ্যে এই কোন্দল সৃষ্টি হয়েছিল তাদের মধ্য একজন বেশ কিছুদিন আগে মৃত্যুবরণ করেছেন। বিভক্ত দুই ইউনিয়নের মধ্য একটির নেতারা নিজেদের স্বাধীনতার বা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে পরিচয় দিয়ে চলেছেন। আগেই ইংগিত করেছি এটা তাদের পছন্দের ব্যাপার। কিন্তু অন্য ইউনিয়ন এবং তার সদস্যদের সাথে বৈষম্য সৃষ্টির জন্য এই শ্লোগানের ব্যবহার কতটুকু যুক্তিসংগত এনিয়ে চিন্তা করার সময় এসেছে। 

আমি সপ্তাহ খানেক আগে উক্ত ইউনিয়্নের নেতার সাথে কথা বলেছি। আমি বললাম, সাংবাদিকের কাজ কি সমাজ পর্যবেক্ষনের, না হারি জিতি নাহি লাজের লক্ষ্যে সবে মিলি করি কাজের। তিনি জবাবে জানালেন এখন বিভক্তির কারণে দ্বিতীয়টি সাংবাদিকদের কাজ হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। করার কিছু নেই। তিনি আক্ষেপ করে বললেন, কিছুদিন আগে তারা দুই ইউনিয়নকে একত্রিত করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু অন্য পক্ষ তাতে সাড়া না দেয়ায় তা সফল হয়নি।

মুসকিল হল জনৈক সাংবাদিক গত সপ্তাহে এক অনুষ্ঠানে নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের পরিচয় দেয়ার পাশাপাশি অন্য একটি ইউনিয়নের সদস্যদের ভিন দেশের মতাবলম্বি হিসেবে আখ্যায়িত করেন। সৌভাগ্য, উক্ত স্মরণ সভায় এমন বক্তব্য প্রদানের প্রতিবাদে কেউ ওঠে দাঁড়াননি। এপর্যন্ত এধরণের লাগামহীন উচ্চারণ উক্ত ইউনিয়নের অন্য কোন নেতা করেননি। এখন পালটা ইউনিয়নের নেতারা যদি তাদের অন্য ভিন-দেশের মতাবলম্বি বলতে শুরু করেন তাহলে বিষয়টা কি দাঁড়াবে? এমনিতেই দলকানা কাজের জন্য সাংবাদিকদের মান মর্যাদা এখন ভূলুন্ঠিত। ইউনিয়ন দুটি যদি পরষ্পরপকে বিভিন্ন ভিন-দেশি মতাবলম্বি বলতে থাকেন, তাহলে অবশিষ্ট মর্যাদাটুকুও আর থাকবে না। যিনি উপরে উল্লেখিত অনাকাংখিত মন্তব্য করেছেন, তিনি এখন আর পেশায় নেই। রাজনীতি এখন তার সার্বক্ষণিক পেশা। যারা সাংবাদিকতা পেশায় আছেন তারা আশাকরি এর মর্যাদা রক্ষায় আরো যত্নবান হবেন। আবারো বলছি, প্রবাদে আছে কাকের মাংস কাকে খায়না।

(মোস্তফা কামাল মজুমদার ইংরেজী অনলাইন দৈনিক গ্রীণওয়াচ ঢাকা পত্রিকার সম্পাদক)