News update
  • UNRWA Report on Humanitarian Crisis in Gaza and West Bank     |     
  • Humans Can't Survive Without a Healthy Ocean: UN Envoy     |     
  • Seaweed’s Power: One Man’s Mission to Save the Planet     |     
  • Khudi Bari in shortlist for Aga Khan Architecture Award     |     
  • During Eid hospitals rest and patients languish sans care     |     

বিডার ‘আমলনামা’ ধৈর্য ধরে পড়ুন: আশিক চৌধুরী

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক ব্যবসায় 2025-06-06, 7:39pm

img_20250606_193416-db2a20e4e1022dfd8ee41364a11fee8c1749217198.jpg




অন্তর্বর্তী সরকারের সময় দেশে আসা বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ নিয়ে আলোচনা এখন সরগরম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এ বিষয়ে কথা বলেছেন।

চলমান এই আলোচনা ও সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন (আশিক চৌধুরী)।

শুক্রবার (৬ জুন) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ‘আমাদের আমলনামা’ শিরোনামে বিডার আট মাসের তথ্য তুলে ধরে ধৈর্য ধরে তা পড়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

স্ট্যাটাসে বিডা কী নিয়ে কাজ করছে, কোন খাতে কতটা অগ্রগতি হয়েছে এবং কোথায় এখনও পিছিয়ে রয়েছে–সবকিছুরই বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।

পাঠকদের জন্য আশিক চৌধুরীর পোস্ট তুলে ধরা হলো:

আমাদের আমলনামা

ঠিক আট মাস হলো বিডা-বেজায় আজকে।

সরকারের বয়স প্রায় দশ মাস। ব্যারিস্টার ফুয়াদ ঠিকই বলেছেন। একটা আমলনামা দেয়া দরকার। আমরা কি শুধু দুইটা প্রেজেন্টেশন করলাম এতদিন ধরে? কিছু সাংবাদিক, ফেসবুক বিশেষজ্ঞ ও বটদের লেখা পড়লে তাই মনে হয়। আমাদের রিপোর্ট কার্ডটি শেয়ার করলাম। ধৈর্য ধরে পড়ার অনুরোধ রইল।

আমাদের কাজ মূলত তিনটা এরিয়ায়: 

ক. বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে পলিসি ও এক্সিকিউশন-এর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়া;

খ. যারা দেশে অলরেডি বিনিয়োগ করেছেন, তাদের কেস-বাই-কেস ইস্যু সমাধানের মাধ্যমে অ্যাম্বাসেডর তৈরি করা, এবং

গ. দেশের ইমেজ ইমপ্রুভ করার পাশাপাশি একটা সলিড ইনভেস্টমেন্ট পাইপলাইন গঠন করা

ক.একদম শুরুর দিকে দুইশর বেশি দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তা ও সিইওদের পরামর্শ অনুযায়ী ৩০টি পদক্ষেপ শনাক্ত করা হয়। তার মধ্যে মোট ১৮টি নির্দিষ্ট সময়সীমার তুলনায় এগিয়ে আছে, ৭টি-তে আমরা অন ট্র্যাক আছি, ৫টি-তে আমরা প্ল্যান-এর থেকে পিছিয়ে আছি। এই প্রগ্রেস আমরা প্রতি দুই মাস পরপর তাদের সাথে ‘স্টেট অব ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট’ নামে ওয়েবিনার হোস্ট করে শেয়ার করি। ওয়েবিনার-এর লিংকগুলা কমেন্টে আছে। ডিসেম্বর নাগাদ সব কমপ্লিট করার টার্গেট।

যেগুলোতে রোডম্যাপ/অরিজিনাল টাইমলাইন থেকে এগিয়ে আছি (প্রায়োরিটি অর্ডারে নয়): 

১. ইনভেস্টর্স কনসালটেশন: ব্যবসায়ে প্ৰতিবন্ধকতা এবং তার সমাধান সম্বন্ধে তাদের সাথে ডিটেইল আলোচনা।

২. ১০০টি ইকোনমিক জোনের বদলে ৫টি-তে ফোকাস করা। সেই পাঁচটিতে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, অন্যান্য ইনফ্রাস্ট্রাকচার-এর একটা রোডম্যাপ পাবলিশ করা। অব্যবহৃত জমিতে সোলার পার্ক করা। সামরিক শিল্পে সক্ষমতার জন্য একটি মিলিটারি/ডিফেন্স ইকোনমিক জোন চালু করা।

৩. প্রতিমাসে আন্তঃমন্ত্রণালয় কো-অর্ডিনেশন মিটিং চালু করা; ব্যবসা পরিস্থিতি আলোচনা ও সমস্যা সমাধান করতে।

৪. গুরুত্বপূর্ণ বিনোয়োগকারীদের সমস্যা সমাধান করতে আলাদা একটি টিম গঠন করা।

৫. বিডার ওয়ানস্টপ সার্ভিস পোর্টাল-এর মাধ্যমে পাওয়া সেবার পারফরম্যান্স ডেটা (কতগুলো সেবা দেয়া হলো, কার কতদিন লাগল) বিডার ওয়েবসাইটে পাবলিক করা।

৬. এফডিআই হিটম্যাপ: বাংলাদেশে কোন সেক্টরে বিনোয়োগ করা উচিত, কোন সেক্টরে সামনে সরকার পলিসি সাপোর্ট দেবে–এরকম একটি রিসার্চ প্রকাশ করা। এর সিক্যুয়েল হিসেবে একটি সেমিকন্ডাক্টর টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। আগামী মাসে তারা রিপোর্ট জমা দেবে।

৭. ফরেন কারেন্সি লোন গ্রহণ প্রক্রিয়ার উন্নতি – স্পিড টু মার্কেট, ফ্লেক্সিবিলিটি ইত্যাদি।

৮. এনবিআরে গ্রিন চ্যানেল বা অথরাইজড ইকোনমিক অপারেটর চালু করা।

৯. এনবিআরে ডিজিটাল ইনভয়েসিং বা ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো চালু করা।

১০. বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরগুলোর এফিসিয়েন্সি বাড়ানোর জন্য পোর্ট স্ট্র্যাটেজি নির্ধারণ। এর ধারাবাহিকতায় একটি ফ্রি ট্রেড জোন স্থাপন।

১১. স্টার্টার প্যাক: ব্যবসা শুরু করার জন্য বেসিক যে কটি অনুমোদন লাগে তা একটা ডিজিটাল ফর্মে নিয়ে আসা।

১২. বিডায় একটি দক্ষ রিসার্চ উইং চালু করা।

১৩. এফডিআই প্রমোশনে সবার জন্য প্রণোদনা বা ইনসেনটিভ প্রোগ্রাম চালু করা।

১৪. ঢাকায় একটি ম্যাচমেকিং ইনভেস্টমেন্ট সামিট আয়োজন করা।

১৫. ইনস্টিটিউশনাল এক্সেলেন্স: বিডা-বেজাকে ডি নথিতে এনে সম্পূর্ণ পেপারলেস করা। বিডা-বেজায় ডেকেয়ার চালু করা কর্মচারীদের জন্য। বিডা অফিসে বিনিয়োগকারীদের এবং কর্মচারীদের জন্য ক্যান্টিন, মিটিং ফেসিলিটি চালু করা।

১৬. কমিউনিকেশন স্ট্রাটেজি বা যোগাযোগ কৌশলের উন্নতি: পরিমার্জিত নতুন ওয়েবসাইট, যেটা এই মাসের শেষে লঞ্চ হবে; বিডা ও বেজার সোশ্যাল মিডিয়া প্রেজেন্স (লিংকডইন, এক্স, ফেসবুক ইত্যাদি), লোগো রিভ্যাম্প, স্টার্টার FAQ ইত্যাদি।

১৭. এনবিআর, পরিবেশ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি বিডা অফিসে কোলোকেট বা সংস্থাপন করা। প্রত্যেক সরকারি অফিসের ব্যবসায়ীদের জন্য একজন ফোকাল পয়েন্ট পার্সনের নাম পাবলিশ করা।

১৮. ওয়ার্ক পারমিট/ভিসা ও সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স ব্যবস্থার উন্নতি। 

অন ট্র্যাক:

১৯. বিডায় গুরুত্বপূর্ণ ইনভেস্টরদের জন্য রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট টিম চালু করা – একইসাথে দুই বছরের একটি প্রোগ্রাম ডিজাইন করে প্রাইভেট সেক্টরের দক্ষ অফিসারদের দেশের জন্য কাজ করার সুযোগ করে দেয়া।

২০. সরকারের সব ব্যবসায়ী সেবার জন্য করা ওয়ানস্টপ সার্ভিস ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে একীভূত করা বা একটি সিঙ্গেল সাইন ইন প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা।

২১. বিভিন্ন লাইসেন্সিং-এর প্রয়োজনীয়তা চ্যালেঞ্জ করে লাইসেন্স-এর সংখ্যা কমিয়ে আনা।

২২. সরকারি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রাইভেটাইজ করা।

২৩. মার্জার ও একুইজিশন রুল সংস্কার।

২৪. বিডা-বেজার আইন আধুনিকীকরণ।

২৫. বিডা, বেজা, বেপজা, হাই-টেক পার্ক ও পিপিপি অথরিটিতে সমন্বয়হীনতা কমাতে তাদের একই ছাতার নিচে নিয়ে আসা।

পিছিয়ে আছি

২৬. প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল চালু করা: সরকারকে একদম আনফিল্টার্ড ফিডব্যাক দেয়ার জন্য।

২৭. ট্যাক্স রুলস: ইনকিউবেশন, গ্র্যান্ডফাদারিং, সানসেট রুলস।

২৮. ক্যাপিটাল রিপেট্রিয়েশন নীতি ও প্রক্রিয়া সংস্কার।

২৯. বিডার সাংগঠনিক কাঠামো সংস্কার/আধুনিকায়ন।

৩০. এনার্জি সিকিউরিটি বা জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ স্ট্র্যাটেজি।

অনেকগুলো উদ্যোগ আমরা ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, ইউএনডিপি, বিভিন্ন অ্যাম্বাসি আর প্রাইভেট সেক্টর পার্টনারদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে করছি। অনেকেই বিনা পারিশ্রমিকে দেশসেবা/সাহায্য করছেন। তাদের ছাড়া কিছুতেই সম্ভব হতো না এগোনো। সংস্কারের কাজ আদৌ হচ্ছে কি না, তাদেরও জিজ্ঞেস করতে পারেন।

খ দেশের এক্সিস্টিং বিনিয়োগকারীদের সমস্যাগুলো সমাধান করার চেষ্টা করা এবং তাদের হয়ে পলিসি অ্যাডভোকেসি করা জরুরি। নতুনরা এসে তাদের কাছেই জানতে চাইবেন এ দেশে ব্যবসা করা উচিত কি না।

–বেশকিছু কোম্পানির ইস্যু সমাধান করা হয়েছে। যেমন: ইয়ংওয়ান গ্রুপ, মেটলাইফ, শেভরন, লাফার্জ, বাংলাদেশ অটোমোবাইলস। তারা পাবলিকলি এগুলো শেয়ার করেছেন। আরও অনেকে বাকি আছেন। তারা ডিজার্ভ করেন। কিন্তু লোকস্বল্পতার কারণে সবাইকে সাহায্য করতে পারছি না।

–পলিসি অ্যাডভোকেসির ক্ষেত্রেও কাজ হচ্ছে। যেমন: ফুল ও পার্শিয়াল বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্স পলিসি সংস্কার, ম্যান মেড ফাইবার আনুষঙ্গিক ইম্পোর্ট ডিউটি হ্রাস, ইনসেনটিভের জন্য নো ডিডাকশন সার্টিফিকেট ইস্যু প্রক্রিয়া বদল ইত্যাদি। কিছু রিফ্লেকশন এই বাজেটে এসেছে। আরও অনেক কিছু বাকি রয়ে গেছে। লম্বা লিস্ট। সামনে আশা করি আরও দেখতে পাবেন।

গ. আমরা আগে কখনও ইনভেস্টর পাইপলাইন ট্র্যাক করতাম না। ইনভেস্টর আমাদের দেশে এমনিতেই আসবে, এই অ্যারোগ্যান্সের কোনো কারণ নাই। বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ম্যানুর অনেকগুলো অপশনের মধ্যে একটা। তা ছাড়া বিদেশে বসে গুগল সার্চ করলে আমাদের নিয়ে যে পারসেপশন তৈরি হয়, সেটা রিয়েলিটির চেয়ে অনেক বেশি নেগেটিভ। সামনের দিনগুলোতে এমন চাতক পাখির মতো যাতে বসে থাকতে না হয়, ইনভেস্টররা যাতে জানেন কেন বাংলাদেশ ২.০ আগের চেয়ে আলাদা, দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীদের যাতে ম্যাচমেকিং হয়, সে জন্য আমরা দুটি সামিটের আয়োজন করেছি; একটি সবার জন্য, আরেকটি চীনকে ফোকাস করে। ৬৭৫ জন বিনিয়োগকারী এসেছেন এই প্রোগ্রামগুলোতে। দ্বিপাক্ষিক মিটিং হয়েছে বাংলাদেশি এবং বিদেশি উদ্যোক্তাদের মধ্যে তিনশর একটু বেশি।

আমরা আগেও বলেছি, বিলিয়ন ডলার ইনভেস্টমেন্ট একদিনে আসে না। সামিটে এসে ইমোশনাল হয়ে কেউ হুট করে ১০০ কোটি টাকার চেক লিখে ফেলে না। যারা এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজে করেন তারা জানেন। তারপরও সৌভাগ্যক্রমে তিনটি একদম নতুন বিনিয়োগ অলরেডি কনফার্ম করেছে। একটি গার্মেন্টস, একটি এয়ারলাইন্সের এমেনিটি কিট ও একটি ঘড়ি ম্যানুফ্যাকচারার। সব মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। দশ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে ফ্যাক্টোরিগুলো চালু হলে। আরও প্রায় ১৫টি প্রজেক্ট আছে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ফাইনাল হতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা একটা সলিড পাইপলাইন তৈরি হলো। ভবিষ্যতে যারা বিডা চালাবেন তাদের শূন্য থেকে শুরু করতে হবে না।

ইনভেস্টমেন্ট সামিট নিয়ে একটা হাইপ তৈরি হয়েছিল। সেটা আমাদের টার্গেট ছিল না। আমি আগেও অনেকবার বলেছি, যে আমরা খালি একটা গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড প্রোগ্রাম ডেলিভার করতে চেয়েছিলাম। এটার জন্য আলাদা কোনো বাহবা পাবার আশা আমরা একদম করি না। আরও ভালো করার অনেক সুযোগ আছে। কাজগুলো কমিটেড সময়ের মধ্যে হচ্ছে কি না, এর জন্য আমাদের অ্যাকাউন্টেবল করুন। ধন্যবাদ।

পুনশ্চ-১: অক্টোবর থেকে এপ্রিলের বিনোয়োগের পরিমাণ আর গত বছরের একই সময়ের নাম্বারটা প্রায় একই। কিন্তু এতে বিডার কোনো ক্রেডিট বা ফেইলিওর নাই। এত বড় অস্থিতিশীল পরিস্থিতির পর এত তাড়াতাড়ি বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ আগের জায়গায় ফিরে গেছে তা আশার কথা।  কিন্তু এর পেছনে মূল শক্তি অর্থনৈতিক টার্ন অ্যারাউন্ড: রিসার্ভ বৃদ্ধি, এক্সচেঞ্জ রেট স্থিতি ইত্যাদি।

পুনশ্চ-২: ইনফর্মেশন প্লিজ ভেরিফায়েড সোর্স থেকে নেবেন। ভুল তথ্যের শিকার হবেন না। আমাদের জিজ্ঞেস করুন। আমরা উত্তর দেবার চেষ্টা করব।