News update
  • Tarique Rahman Pays Tribute at Shaheed Osman Hadi’s Grave     |     
  • Tarique visits National Martyrs’ Memorial, pays homage to martyrs     |     
  • Muslim League leads new electoral alliance, Jatiya Muslim Jote     |     
  • Tk 500cr Drive to Turn Haor Fallow Land Into Farmland     |     
  • Tarique Rahman returns home amid rapturous reception     |     

লাগেজ ভোগান্তির অভিযোগ থেকে বেরোতে পারছে না ঢাকার বিমানবন্দর

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক প্রবাস 2023-02-14, 2:25pm

8f36e120-aba7-11ed-b649-393a4c11b50c-676127d1b547d46395c566cc7a57b7711676363103.jpg




ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীদের লাগেজ হারিয়ে যাওয়া, লাগেজ ভাঙা এবং লাগেজ পেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগাসহ নানা ধরনের ভোগান্তির অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

অনিচ্ছাকৃত ভুলে আরেকজনের লাগেজ নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি চুরির অভিযোগও পাওয়া গিয়েছে।

এসব ভোগান্তি কমাতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সিসি ক্যামেরা ব্যবহার ও নজরদারি বাড়ানোসহ নানা উদ্যোগ নেয়ার কথা বললেও ভোগান্তি থামানো যাচ্ছে না।

মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, লাগেজ হারানোর ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় এয়ারলাইন্স দায়ী। বিমানবন্দর থেকে লাগেজ খোয়া গেলে সেটা খুঁজে বের করে যাত্রীকে বুঝিয়ে দেয়া হয়।

ঢাকার বাসিন্দা তসলিম হোসেনকে ব্যবসার প্রয়োজনে নিয়মিত থাইল্যান্ডে ভ্রমণ করতে হয়। তিনি বলছেন থাইল্যান্ড থেকে ফিরতে তার যেখানে দুই ঘণ্টা সময় লাগে, সেখানে বিমান থেকে বেল্টে লাগেজ পেতেও সময় লাগে আরও এক থেকে দুই ঘণ্টা।

অনেক সময় লাগেজগুলো এলোপাথাড়ি ছুড়ে লাগেজ ভাঙা, ভেতরে থাকা জিনিসপত্রের ক্ষতি হওয়ার অভিযোগও তিনি করেছেন। এজন্য লাগেজ হ্যান্ডলিংয়ের কর্মীদেরই দায়ী করছেন তিনি।

গত বছরের অগাস্টে সিডনি ফেরত যাত্রী ফিরোজা জাহান ঢাকার বিমানবন্দরে নামার পর তার তিনটি লাগেজের দুটি হারিয়ে ফেলেন। এ নিয়ে অভিযোগ দায়েরের পর তিনি সম্প্রতি একটি লাগেজ অক্ষত অবস্থায় ফেরত পেলেও, আরেকটির কোন হদিশ নেই।

এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ তাকে জানিয়েছে, লাগেজটি ওইদিন খালাস করা হলেও বিমানবন্দরে আসার পর থেকে তার কোন খোঁজ মিলছে না।

এ নিয়ে তিনি বিমানবন্দরের সাথে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও এখন পর্যন্ত কোন সুরাহা হয়নি।

অনেক যাত্রী এমন ভোগান্তির মুখে পড়লেও বেশিরভাগ সময় তারা লাগেজ ফেরত পান। না হলে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার বিধি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকে।

তবে লাগেজ যদি বিমানবন্দর থেকে হারানো যায় তাহলে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সেটি উদ্ধার করে বা খুঁজে বের করে বিনামূল্যে গ্রাহকের ঠিকানায় পাঠানোর ব্যবস্থা করে বলে বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

খুব সম্প্রতি হংকং থেকে ফিরে বেল্টে লাগেজ না পেয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে বিষয়টি জানান এক যাত্রী। পরে তারা সেই লাগেজ ভেতর থেকে এনে দেন এবং সেটার বিনিময়ে বখশিশ দিতে ওই যাত্রীকে বাধ্য করারও অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালনা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে তিনটি বিভাগ কাজ করে - এয়ারলাইন্স, সিভিল অ্যাভিয়েশন এবং আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়ন (এপিবিএন)৷

সিভিল অ্যাভিয়েশেন মূলত বিমানবন্দরের সার্বিক পরিচালনার দায়িত্বে থাকে৷ প্রতিটি পর্যায় মনিটরিং করে এপিবিএন৷

বিমানবন্দরে কোন মালামাল হারিয়ে গেলে তা উদ্ধারের সহযোগিতার জন্য লস্ট এন্ড ফাউন্ড বিভাগে অভিযোগ দায়েরের সুযোগ রয়েছে৷

লস্ট এন্ড ফাউন্ডে প্রতিদিন যেসব অভিযোগ জমা হয়, এয়ারলাইন্স কর্মকর্তারা সেগুলোর খোঁজ খবর করে থাকেন। কোন লাগেজ হারানো গিয়েছে জানা গেলে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স নিজেদেরসহ সব বিদেশি এয়ারলাইন্সের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং-এর দায়িত্ব পালন করে৷ একটি বিমান অবতরণের পর এর মালামাল কনভেয়ার বেল্টে নিয়ে আসার কাজ করে বিমানের হ্যান্ডেলাররা৷

নাম প্রকাশ করতে চাননি মন্ত্রণালয়ের এমন একজন কর্মকর্তা জানান, বিমান ল্যান্ড করার পর থেকে লাগেজ বেল্টে আসা পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটি বিমানবন্দরের সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয়। সেখানে এপিবিএন-এর কর্মকর্তারা নজরদারিতে থাকেন। তাই লাগেজ চুরি যাওয়ার কোন সুযোগ নেই।

তবে তিনি জানান, যাত্রীরা ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে লাগেজ তুলে নেয়, এমন ঘটনার কথা তারা জানতে পেরেছেন।

“সাধারণত যাত্রীদের বোর্ডিং পাসের পেছনে লাগেজের নম্বর দিয়ে দেয়া হয়। বেল্ট থেকে লাগেজ নিয়ে বের হওয়ার আগে আমাদের সিকিউরিটির সদস্যরা সেই নম্বর মিলিয়ে দেখেন। তাই আরেকজনে লাগেজ নেয়ার সুযোগও অনেক কম। কেউ নিলেও সেটা বের করা যাবে।”

যাত্রীরা চাইলে বিমানবন্দর থেকে হারানো মালামালের জন্য ঢাকার বিমানবন্দর থানায় মামলা করতে পারে। তবে হয়রানির ভয়ে বেশিরভাগই তা করেন না।

আবার অনেক যাত্রী জানেন না লাগেজ হারিয়ে গেলে তারা কার কাছে গেলে প্রতিকার পাবেন৷

অনেক সময় বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের ভুলে ফেলে যাওয়া, লেফট বিহাইন্ড বা যাত্রীর সাথে না আসা ব্যাগ বিমানবন্দরের লস্ট এন্ড ফাউন্ডে জমা পড়ে থাকে।

যাত্রীরা কোন খোঁজখবর নেন না আবার যাত্রীদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করতে না পারলে ব্যাগগুলো ফেরত দেওয়া সম্ভব হয় না।

এভাবে কোন ব্যাগ তিন মাসের বেশি সময় পড়ে থাকলে সেটি নিলামে তোলা হয়।

গত বছর সিভিল অ্যাভিয়েশনের গণশুনানিতেও লাগেজ হ্যান্ডলিংয়ের বিষয়ে প্রচুর অভিযোগ জমা পড়ে। কর্মচারীদের যোগসাজশে লাগেজ গায়েব বা মালামাল চুরির মতো ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এই ‘লাগেজ ভোগান্তি’ নিরসনে মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি রয়েছে। তাদের অনুসন্ধানে লোকবলের স্বল্পতা, সক্ষমতা ও পেশাদারিত্বের অভাব সেইসঙ্গে যন্ত্রপাতি ও যানবাহন না থাকার বিষয়টি উঠে এসেছে।

ওই কমিটি গত ৩০শে অক্টোবর শাহজালাল বিমানবন্দর পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দেয়।

সেখানে বলা হয়, প্রয়োজনের তুলনায় ‘টো ট্রাক্টর’ কম থাকায় এবং ‘র‌্যাম্প এরিয়ায়’ জায়গা কম থাকায় লাগেজ ডেলিভারিতে সময় বেশি লাগছে।

বিমানবন্দরে দুটি লাগেজ স্টোর আছে। যেসব লাগেজ যাত্রীদের সঙ্গে একই ফ্লাইটে না এসে দেরিতে আসে, সেগুলো রাখার জন্য প্রতিটি এয়ারলাইন্সের জন্য দুটি লাগেজ স্টোরে জায়গা বরাদ্দ থাকে।

লাগেজ স্টোর-২ পরিদর্শন করে মালিকানাহীন অনেক ব্যাগেজ এলোমেলোভাবে পড়ে থাকার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

সেখানে বলা হয়, এপিবিএন ও অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটির সদস্যরা মালিকানাবিহীন ব্যাগেজ স্টোর-২ এ এনে বিমানের লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ডের কর্মীদের বুঝিয়ে দিচ্ছেন না। ফলে মালিকানাবিহীন ব্যাগেজের সঠিক হিসাব থাকছে না।

কিছু এয়ারলাইন্স দেরিতে আসা লাগেজ কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের পর ব্যাগেজ স্টোর-২ এ না এনে সরাসরি ভেন্ডরকে হোম ডেলিভারির জন্য দিয়ে দিচ্ছে। আবার হোম ডেলিভারির সঠিক হিসাব ব্যাগেজ স্টোর-২ এ রক্ষিত রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ হচ্ছে না।

এমন অবস্থায় লাগেজ ভোগান্তি দূর করতে ছয়টি সুপারিশ করে কমিটি।

মালিকানাবিহীন ব্যাগেজের রেকর্ড সংরক্ষণ এবং অতিদ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা। এ ক্ষেত্রে সব এয়ারলাইন্স, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কর্তৃপক্ষ, এপিবিএন, কাস্টমস ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মধ্যে সমন্বয় স্থাপন।

অফলোড করা সব লাগেজ তাৎক্ষণিকভাবে বুঝিয়ে দেওয়া।

বিদেশে সিকিউরিটি চেকিংয়ের সময় লাগেজ খোলা হলে যাতে আবশ্যিকভাবে সিকিউরিটি সিল/মেসেজ দেওয়া। এ জন্য সব এয়ারলাইন্সে এই বার্তা পাঠানো।

হোল্ডে ওঠা এবং সেখান থেকে নামার সময় নিয়মিতভাবে ট্রাফিক হেলপারদের দেহ তল্লাশি করা যেতে পারে।

যাত্রীদের নন-স্ট্যান্ডার্ড লাগেজ বহন নিরুৎসাহিত করতে হবে। এ জন্য আগমনী ফ্লাইট পরিচালনাকারী সব এয়ারলাইন্সকে বার্তা দেওয়া যেতে পারে।

লাগেজ পরিবহনে ‘টো ট্রাক্টর’ বাড়ানো।

কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিদিন ১২০টির বেশি ফ্লাইট ওঠানামা করে। প্রতিদিন আসা-যাওয়া করে ২০ হাজারের বেশি যাত্রী।

একসঙ্গে পাঁচ-ছয়টি ফ্লাইট বিদেশ থেকে আসে। এত যাত্রী সামলানোর জন্য লোকবল ও যন্ত্রপাতি পর্যাপ্ত নয় বলে ওই কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

শাহজালাল বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সার্ভিসে প্রায় ১২০০ মানুষ কাজ করেন।

অন্যদিকে লাগেজ বেল্ট রয়েছে আটটি। এর মধ্যে দুই থেকে তিনটি বেল্ট মেরামতের জন্য প্রায়ই বন্ধ থাকে। ফলে এতো যাত্রীর চাপ সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়।

অবকাঠামোগত স্বল্পতার বিষয়টি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ স্বীকার করলেও জনবল সংকট নিরসনে ধীরে ধীরে নিয়োগ বাড়ানোর কথা জানান তারা।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জানান, “আমাদের অবকাঠামোগত সমস্যা যে রয়েছে সেটা অস্বীকার করবো না। তবে টার্মিনাল থ্রি এর কাজ সম্পন্ন হলে সেটা সমাধান হয়ে যাবে। আর জনবল নিয়োগ একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, সেটা চলমান আছে।” তথ্য সূত্র বিবিসি বাংলা।