News update
  • C. A. Dr. Yunus’ China Tour Cements Dhaka-Beijing Relations     |     
  • Myanmar quake: Imam's grief for 170 killed as they prayed in Sagaing     |     
  • Eid Tourism outside Dhaka turning increasingly monotonous      |     
  • China visit a ‘major success’ for interim government: Fakhrul     |     
  • NYT paints troubling, one-sided view of Bangladesh     |     

ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে ঘুরে আসার সেরা গন্তব্য হতে পারে কক্সবাজার

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক পর্যটন 2025-03-30, 5:19pm

ertet353-4ef32ae9e50d288e3e484e87bd5d909d1743333586.jpg




প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। যেখানে পাহাড়, সাগর ও প্রকৃতির রয়েছে এক অপরূপ মিতালী। সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ছে উপকূলে, ঢেউয়ের সঙ্গে খেলা করে ডিঙি নৌকা। রয়েছে সাগরের সামনে বিশাল বালিয়াড়ি। এ বালিয়াড়িতে খেলা করে লাল কাঁকড়া। দল বেঁধে ছোটাছুটি করে এদিক-ওদিক।

সমুদ্রসৈকতের বুকে আঁকা এ প্রাণীর আলপনা যেন নজরকাড়া। তাই তো ঈদুল ফিতরের টানা ছুটিতে ভ্রমণপিপাসুদের কাছে টানে কক্সবাজারের এমন প্রকৃতি

এবারের ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে ঘুরে আসার সেরা গন্তব্য হতে পারে সমুদ্রসৈকত শহর কক্সবাজার। কক্সবাজার যেতে চাইলে, শুধু কলাতলী, সুগন্ধা বা লাবণী সৈকতেই সীমাবদ্ধ থাকবেন না। বরং বেরিয়ে পড়ুন ভিন্ন স্বাদ পেতে। দেখে আসুন সমুদ্র-পাহাড়ের মিতালি, নির্জন সৈকতের নৈসর্গিক সৌন্দর্য কিংবা দেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ।

ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে ঘুরে বেড়ানোর সেরা গন্তব্যগুলো:

প্রাচীন ঐতিহ্য আজগবি মসজিদ

কক্সবাজার ভ্রমণে আসা পর্যটকরা কক্সবাজারের প্রচীন ঐতিহ্য সমুহ ঘুরে দেখেন। এর মধ্যে আলোচিত হচ্ছে আজগবি মসজিদ। এটি ১৬০০-১৭০০ খ্রিস্টাব্দে শাহ সুজার আমলে তৈরি হয়েছিল। এটি চৌধুরী পাড়া মসজিদ হিসেবেও পরিচিত। কক্সবাজার পৌরসভার বিজিবি ক্যাম্পের উত্তর দিকে এটি অবস্থিত। রিকশা, টমটম যোগে ওখানে যাওয়া যায়। কক্সবাজার পৌরসভার গেট থেকে ভাড়া পড়বে ৫০-৮০ টাকা।

অগ্গ মেধা বৌদ্ধ ক্যাং

কক্সবাজার শহরে ছোট-বড় মিলিয়ে ৭টিরও বেশি বৌদ্ধ ক্যাং রয়েছে। আগ্গা মেধা ক্যাং ও মাহাসিংদোগীক্যাং সবচেয়ে বড়। শহরের প্রবেশদ্বারের কাছেই এর অবস্থান। দীর্ঘ আকৃতির সব বৃক্ষের ছায়ার নিচে গম্ভীর ভাবমূর্তি আপনাকে বিনম্র হতে বাধ্য করবে। আপনি লক্ষ্য করলে দেখবেন, কাঠের কলামগুলোতে খোদিত হয়েছে বুদ্ধের অসাধারণ সব প্রতিকৃতি। সংরক্ষিত রয়েছে বহু পুরনো হস্তলিপি। আরও সংরক্ষিত রয়েছে চুনাবালি ও ব্রোঞ্জের তৈরি বুদ্ধের মূর্তি। সাধারণ কিছু রীতি-নীতি মেনে যে কেউ ঘুরে দেখতে পারেন।

নাজিরারটেক: নির্জন সৈকতের আহ্বান

সাগরের গর্জন শুনতে চান, কিন্তু কোলাহল পছন্দ নয়? তাহলে কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরের নাজিরারটেক সৈকতই আপনার জন্য। যেতে হবে নাজিরারটেক শুটকি মহালের পাশ দিয়ে। শুটকির গন্ধ পেরিয়ে পৌঁছে যাবেন শান্ত-নির্জন সৈকতে। কলাতলী ডলফিন মোড় থেকে টমটম বা সিএনজিতে যেতে খরচ পড়বে ২০০-২৫০ টাকা। বালিয়াড়িতে পা ডুবিয়ে সমুদ্রের গর্জন শুনতে শুনতে সময় কাটানো এখানে এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। শুঁটকি তৈরি এবং জেলেদের জীবনধারা সামনে থেকে দেখতে পাবেন এখানে এলে।

লাবণী সৈকত

কক্সবাজারে লাবনী সৈকতের জনপ্রিয়তা অনেক উপরে। অনেকে কক্সবাজারের সবচেয়ে সুন্দর সৈকত বলেন এটিকে। থাকা-খাওয়া, যানবাহন থেকে শুরু করে প্রায় সবই এখানে হাতের কাছে পাবেন। অর্থাৎ যে কোনো মানের সার্বিক ব্যবস্থা এখানে রয়েছে। কাছেই শত শত ছোট দোকান পাবেন। সেখানে ঝিনুকের তৈরি উপহার সামগ্রী ও অলংকার বিক্রি হয়। এ ছাড়াও পাওয়া যায় সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণ সহযোগী উপকরণ যেমন হাফ, থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট, হ্যাট, ক্যাপ, ছাতা, চশমা ইত্যাদি। এই সৈকতে সার্ফিং করা ও বীচ বাইক চালানোর ব্যবস্থা রয়েছে।

সুগন্ধা সৈকত

সমুদ্র স্নানের প্রকৃত স্বাদ নিতে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক সুগন্ধা সৈকত ভ্রমণ করে। সমুদ্রস্নানের পাশাপাশি স্কি-বোটে করে ভেসে বেড়ানোর ইচ্ছাটিও পূরণ করা যায় এখানে। রাস্তার দুপাশে সামুদ্রিক তাজা মাছের হরেক পদ পরখ করে দেখার শখ কিন্তু অনেকেরই থাকে। এখানে সেই শখ মিটবে আপনার। এই সৈকতে চাঁদের আলোয় হাঁটার চমৎকার পরিবেশ রয়েছে।

দরিয়ানগর

পশ্চিমে বিশাল বঙ্গোপসাগর, পূর্বে উঁচু পাহাড়। মাঝখান দিয়ে চলে গেছে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক। এই পথ ধরে কক্সবাজার থেকে আট কিলোমিটার এগিয়ে গেলে নজরে পড়বে সবুজশ্যামলে ভরা একটি গ্রাম বড়ছড়া। এ বড়ছড়ার উঁচুনিচু বিশাল পাহাড় নিয়ে গড়ে উঠেছে পর্যটনের বিনোদন কেন্দ্র ‘দরিয়ানগর’। দরিয়ারগরে উঁচু পাহাড়ের নিয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার লম্বা আঁকাবাঁকা একটি সুড়ঙ্গ, নাম শাহেনশাহ গুহা। এছাড়া ১০০ ফুট উঁচু পাহাড় চূড়ায় ছন আর কাঠ দিয়ে তৈরি ‘চেরাংঘর’ বা ‘আড্ডাখানা’। এখানে বসে দেখা যাবে দরিয়া বা সমুদ্রদর্শন। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়ালে মনে হবে, যেন বঙ্গোপসাগরের নীল জলের ওপরই দাঁড়িয়ে আছে। এছাড়া দরিয়ানগর সৈকতে প্যারাসেলিং করারও সুযোগ রয়েছে।

হিমছড়ি পাহাড় ও ঝর্ণা

দৃষ্টি যত দূর যায়, আকাশ আর সমুদ্র মিশে একাকার। তারই এক পাশ দিয়ে ছুটে চলে গাড়ি। পথের আর এক পাশে সুদীর্ঘ পাহাড়। কক্সবাজার থেকে দক্ষিণে ১৫ কি.মি. দূরে হিমছড়ির অবস্থান। এবার ভেবে দেখুন, নিরিবিলি সেই সড়কে ছুটছে আপনাকে বহনকারী জিপ অথবা ব্যক্তিগত গাড়ি। হিমছড়ি একটি জনপ্রিয় পিকনিক স্পট, একইসঙ্গে শুটিং স্পটও। এখানে একটি ঝরনাও রয়েছে। হিমছড়ির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ এর যাত্রাপথের সৌন্দর্য।

মেরিন ড্রাইভ: পাহাড় আর সমুদ্রের হাতছানি

কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ এখন অনেকেরই পছন্দের গন্তব্য। এক পাশে নীল সাগর, অন্য পাশে সবুজ পাহাড়—সড়কের দুপাশের সৌন্দর্য পথকেই গন্তব্য করে তুলেছে। চাইলে সারাদিনের জন্য সিএনজি বা অটোরিকশা ভাড়া নিতে পারেন ১৫০০ টাকায়।

পাথুরে সৈকত ইনানী ও পাতুয়ারটেক

নীরব পরিবেশই পাতুয়ারটেক ও ইনানী সমুদ্র সৈকতকে অধিক জনপ্রিয় করে তুলেছে। দীর্ঘ সৈকতজুড়ে রয়েছে সোনালী বালু। স্বপ্নের মতো পরিবেশ বলতে যা বোঝায় ইনানী তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সৈকতের পাশ দিয়ে বহু পুরনো কোরাল বোল্ডার (পাথর)। ধরুন কোনো একটি বোল্ডারে একাকী কিছুক্ষণের জন্য বসেছেন, অমনি একটি প্রকান্ড ঢেউ এসে আছড়ে পড়ল আপনার সামনে। ফিরে যাওয়ার সময় সেই ঢেউ বালুকাবেলায় রেখে গেল নানা রঙের বাহারী সব ঝিনুক। ঢেউ পাথরের খেলা ইনানীতে নিত্তদিনের বিষয়। এখানকার সূর্যাস্ত যে কারোরই হৃদয় ভরিয়ে দেবে মুগ্ধতায়। এই সৈকত কক্সবাজার থেকে মেরিন ড্রাইভ ধরে বত্রিশ কি.মি. দূরে উখিয়ায় অবস্থিত।

মাথিনের কূপ

উপন্যাসিক ধীরাজ ভট্টাচার্য উনবিংশশতাব্দীর প্রথমদিকে এস.আই. হিসাবে টেকনাফ থানায় বদলী হয়ে এসেছিলেন। তখন টেকনাফের নাম করা রাখাইন জমিদার ওয়াংথিনের একমাত্র আদুরে কন্যা মাথিন থানার সামনের কুয়া থেকে নিয়মিত পানি নিতে আসতো। সকাল বিকাল পানি নিতে আসা ছিল মাথিনের সখ। পুলিশ কর্মকর্তা প্রতিদিন থানার বারান্দায় বসে বসে অপূর্ব সুন্দরী মাথিনের পানি নিতে আসা যাওয়া দেখতেন। আস্তে আস্তে ধীরাজভট্টাচার্যের সঙ্গে মাথিনের চোখা চোখি এবং পরে তা’ প্রেমে পরিণত হয়। বিয়ে করতে ব্যর্থ হলে, মাথিন বিচ্ছেদের জ্বালায় তিলে তিলে দগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করে। মাথিনের অতৃপ্ত প্রেমের ইতিহাসের নীরব সাক্ষী মাথিনের কুপ। টেকনাফ থানা প্রাঙ্গনে একুপের অবস্থান। বিশিষ্ট সাংবাদিক আবদুল কুদ্দুস রানা ১৯৯৪ সালে বাঁশের তৈরী কূপটি সংস্কারের উদ্যোগ নেন। পরবর্তীতে জেলা পরিষদ থেকে এদিকে সংস্কার করা হয়। এখন কূপটি দেখতে খুবই আকর্ষনীয়। সেখানে প্রেমের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসও লেখা রয়েছে। ইদানীং উল্লিখিত কাহিনী অবলম্বনে স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে একটি স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচিত্রও নির্মিত হয়েছে।

মহেশখালী: একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপের টানে

কক্সবাজার থেকে স্পিডবোটে মাত্র ১৫-২০ মিনিটের পথ। নদীর বুকে বাতাসের শীতল স্পর্শ, ঢেউয়ের খেলা আর দূরে পাহাড়ের সারি মন ভরিয়ে দেবে। মহেশখালীতে গেলে দেখতে পাবেন আদিনাথ মন্দির, শুটিং ব্রিজ, বৌদ্ধ মন্দির ও লবণের মাঠ। আবার ম্যানগ্রোভ জঙ্গলে ঘুরে নিতে পারেন সুন্দরবনের স্বাদও।

রামু: বৌদ্ধবিহার আর ইতিহাসের গল্প

ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য রামু হতে পারে চমৎকার গন্তব্য। এখানে রয়েছে গৌতম বুদ্ধের ১০০ ফুট লম্বা সিংহশয্যা মূর্তি। রাংকোট বৌদ্ধবিহার কিংবা কেন্দ্রীয় সীমাবিহারও চোখে পড়ে। আর এখানেই রয়েছে কক্স সাহেবের বাংলো। ব্রিটিশ কূটনীতিক ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের নামে কক্সবাজারের নামকরণ। ইতিহাসের টুকরো ছুঁয়ে দেখতে চাইলে এখানে একবার যেতেই হবে।

ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সাফারি পার্ক এটি। কক্সবাজারের ডুলাহাজরায় এর অবস্থান। পার্কজুড়ে রয়েছে বয়লাম, গর্জন, তেলশুর এবং চাপালিশসহ নানা প্রজাতির গাছ। পশুপাখিও রয়েছে প্রচুর! উন্মুক্ত স্থানে বন্যপ্রাণির বিচরণ আপনাকে মুগ্ধ করবে। পার্কের অভ্যন্তরে বিশেষ বাস অথবা জিপে করে সেগুলো দেখার সুযোগ পাবেন আপনি। পাহাড়ি এলাকায় গড়ে তোলা এই পার্কের আয়তন ২,২২৪ একর। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে অবস্থিত হওয়ায় যাতায়াতও সহজ। যে কারণে এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরেকটি তথ্য পাঠকদের জানিয়ে রাখি, ডুলাহাজরাতেই রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক। এটি দেশের প্রথম সাফারি পার্ক। এখানে রয়েছে বাঘ, সিংহ, চিতাবাঘ, হাতি, নীলগাই, জেব্রা, জিরাফ, সাম্বার হরিণ, বাঁশভালুক, বন্যশুকর, চিত্রা ও মায়াহরিণ, প্যারাহরিণ, অজগর, বনমোরগ, গয়াল, বিভিন্ন প্রজাতির বিড়াল, বিভিন্ন প্রজাতির বানর, ভারতীয় বনরুই, সজারু, স্প্রংবক, কুদু, উল্লুক, খেঁকশিয়াল, উড়ন্ত কাঠবিড়ালী, বড়বেজী, সাপের বিভিন্ন প্রজাতি, মিঠা পানির কুমির, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, বিভিন্ন প্রজাতির কাছিম, হাজারো রকমের বিরল গাছপালা আরও অনেক প্রাকৃতিক জীবজন্তু।

কক্সবাজার শুধু সমুদ্র নয়, পাহাড়-নদী-ঐতিহ্যেরও শহর। এবার ঈদের ছুটিতে সেখানে গেলে তালিকায় রাখুন এই সেরা গন্তব্যগুলো। সমুদ্রের ঢেউ, পাহাড়ের ছায়া আর ইতিহাসের গল্প-সব মিলিয়ে ফিরতে হবে একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে। সময় সংবাদ