
দেশে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের পরিপ্রেক্ষিতে এর ঝুঁকি মোকাবিলা ও প্রস্তুতি জোরদারে দ্রুত প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপকদের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানানো হয়।
পোস্টে বলা হয়, সভায় উপস্থিত বিশেষজ্ঞরা মত দেন যে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের কারণে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। বরং জনগণের উচিত প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং সচেতন হওয়া।
তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ৪৮ ঘণ্টা বা ১০ দিনের মধ্যে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হবে–এমন অপতথ্য (গুজব) ছড়ানো হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেন, ভূমিকম্প কখন হবে–তা কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারে না।
ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহত ও আহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা হাত গুটিয়ে রাখতে চাই না, আবার অবৈজ্ঞানিক কোনো পদক্ষেপও নিতে চাই না। আপনাদের পরামর্শগুলো দ্রুত লিখিত আকারে আমাদের দিন; সরকার প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে প্রস্তুত।’
তিনি আরও জানান, সরকার দ্রুত বিশেষজ্ঞ কমিটি এবং এক বা একাধিক টাস্কফোর্স গঠনের কাজ করছে।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, ভূমিকম্পের প্রস্তুতি হিসেবে কী ধরনের মহড়া প্রয়োজন হবে, সে বিষয়েও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘ভূমিকম্পের প্রস্তুতি নিয়ে আমরা কোন পর্যায়ে আছি সেটিও মূল্যায়ন করতে হবে।’
বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ও ভূমিকম্প-বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও সমন্বয়ের পরামর্শ দেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘ভূমিকম্প নিয়ে যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করছে তাদেরকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় বাড়াতে হবে।’
ড. ইউনূস বলেন, “আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ‘শুভেচ্ছা’ নামে একটি অ্যাপ করেছি। এই অ্যাপের মাধ্যমে বিদেশে থাকা বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যুক্ত হোন। অ্যাপটিতে আরও কী ধরনের ফিচার আনা যেতে পারে, সে বিষয়েও আমাদের পরামর্শ দিন।”
বৈঠকে অংশ নেয়া বিশেষজ্ঞরা সরকারকে তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি কিছু পদক্ষেপের পরামর্শ দেন। অধ্যাপক ড. জিল্লুর রহমান বলেন, দেশের আশপাশে ভূমিকম্পের উৎসগুলো পর্যালোচনা করে ‘শেকিং লেভেল’ নিরূপণ করতে হবে। তিনি আশ্বস্ত করেন, বাংলাদেশ স্বল্প ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকার মধ্যে থাকলেও পর্যাপ্ত প্রস্তুতি জরুরি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আখতার বলেন, জনসচেতনতা তৈরিতে তরুণদের কাজে লাগানো জরুরি এবং চার স্তরে (ইনডোরে, আউটডোরে, ব্যক্তি পর্যায়ে ও প্রতিষ্ঠানে) করণীয় পরিকল্পনা তৈরি করে সবার কাছে পৌঁছাতে হবে।
চুয়েটের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর মান ও ঝুঁকি মূল্যায়ন করার পরামর্শ দেন। এমআইএসটির অধ্যাপক মো. জয়নুল আবেদীন বলেন, মানুষকে মাথা ঠান্ডা রাখার বিষয়ে সচেতন করতে হবে এবং বাসাবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মহড়া আয়োজন করা জরুরি। বিশেষজ্ঞরা হাসপাতালগুলোর ভবন মান এবং জরুরি পরিস্থিতি সামাল দেয়ার সক্ষমতা মূল্যায়ন করে প্রস্তুত রাখারও তাগিদ দেন।
গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী মো. খালেকুজ্জামান চৌধুরী জানান, এরইমধ্যে একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে ভূমিকম্পের ফলে ফাটল ধরা ভবনের ছবি সংগ্রহ শুরু হয়েছে। এর মধ্য থেকে দুইশর বেশি ভবনের মূল্যায়ন করা হয়েছে, যেখানে বেশিরভাগই পার্টিশন দেয়ালে ফাটল দেখা গেছে।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিশেষজ্ঞদের লিখিত সুপারিশ পাওয়া মাত্রই সরকার দ্রুত আলোচনা করে টাস্কফোর্স গঠন করবে, যেখানে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা যুক্ত থাকবেন।