News update
  • UN Security Council condemns Jammu and Kashmir terror attack     |     
  • 250,000 mourners pay last respects to Pope Francis in 3 days      |     
  • US Restructuring Plan May Include World Bank, IMF & UN Agencies     |     
  • AL-BNP clash leaves over 50 injured in Habiganj     |     
  • Bangladeshi youth injured in BSF firing along Akhaura border     |     

সরেজমিন দিনাজপুর: ভবেশ রায়ের মৃত্যুর আগে তিনঘণ্টায় যা যা ঘটেছিল

বিবিসি নিউজ বাংলা খবর 2025-04-25, 8:42pm

rttryrtytry-af8cf76f8fc1baf6eaeb850cdbd571951745592139.jpg

ভবেশ চন্দ্র রায়ের ছবি হাতে স্ত্রী সান্তনা রানী



বাড়ি থেকে সুস্থ অবস্থায় বেরিয়ে যাবার পর মাত্র সাড়ে তিন বা চার ঘণ্টার মধ্যে ভবেশ চন্দ্র রায় কেন লাশ হয়ে ঘরে ফিরলেন, এই প্রশ্ন ‌উঠেছে। সরেজমিনে দিনাজপুর ঘুরে ভবেশ রায়ের পরিবারের সদস্য ও পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে সেদিন ঠিক কী হয়েছিল, সেটি জানার চেষ্টা করেছে বিবিসি বাংলা।

ভবেশ রায় মৃত্যুর দিনে কোথায় কোথায় গিয়েছেলেন, কোথায় অসুস্থ হলেন, মৃত্যু নিয়ে পরিবারের সন্দেহ কেন- এমন অনেক প্রশ্ন রয়েছে।

দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় ভবেশ রায় তার বাড়ি থেকে যে বাজারে গিয়ে অসুস্থ হন এবং সবশেষ যে বাজারে পরিবারের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়, সেখানে প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা হয় বিবিসির প্রতিবেদকের। এছাড়াও সেদিন তাকে যে দুজন বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়েছিল, তাদের সঙ্গেও কথা হয়।

ভবেশ রায়ের মৃত্যুর আগের তিনঘণ্টার ঘটনাপ্রবাহ কেমন ছিল- সেটাই খতিয়ে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।

দিনাজপুরে ভবেশ চন্দ্র রায়ের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য- বিবৃতি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এই মৃত্যুকে অস্বাভাবিক এবং পরিকল্পিত হত্যা সন্দেহ করে পরিবারের পক্ষ থেকে চারজনের নামে বিরল থানায় গত মঙ্গলবার হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

পূর্বপরিচিতদের সঙ্গেই বেরিয়েছিলেন ভবেশ রায়

ভবেশ রায় ১৭ই এপ্রিল বৃহস্পতিবার বিকেল আনুমানিক পাঁচটা থেকে সাড়ে পাঁচটা নাগাদ দিনাজপুর বিরল উপজেলার শহরগ্রাম ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামের বাড়ি থেকে পূর্বপরিচিত লোকেদের সঙ্গে বেরিয়েছিলেন।

তিনি তার স্ত্রী সান্তনা রানীকে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় বলেছিলেন বেড়াতে যাচ্ছেন। কোথায় ঘুরতে যাচ্ছেন- স্ত্রীর ওই প্রশ্নের কোনও উত্তর না দিয়েই রতন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে যান।

ঘটনার দিন দুটি মটরসাইকেল নিয়ে চারজন বাড়ির সামনে এসেছিলেন বলে দাবি করেন ভবেশের স্ত্রী ও এলাকার লোকজন।

গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভবেশ রায় একটি মটরসাইকেলের মাঝের আসনে বসেছিলেন। তার বাইরে যাওয়ার বিষয়টিকে ভবেশের স্ত্রী জোরপূর্বক তুলে নেওয়া বা কোনো সন্দেহের চোখে দেখেননি।

কারণ তার ভাষায় চারজনের দুজন রতন এবং আতিক ছিলেন পূর্বপরিচিত। অন্যদুজন ছিলেন মুন্না এবং রুবেল। তারা সান্তনা রানীর অপরিচিত।

ঘটনার দিন সঙ্গে থাকা আতিক বিবিসি বাংলাকে জানান, ভবেশ রায়ের সঙ্গে তার দশ বছরের সম্পর্ক। দুজন দুজনের বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনে তারা একসঙ্গে ঘোরাফেরা করতেন বলেও দাবি আতিকের।

ভবেশ রায় যখন বাড়ী থেকে বেরিয়ে যান, তখন তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন। ওইদিন মাঠে কাজ করেছেন। তার কোনো শারিরীক সমস্যা ছিল না বলে ভবেশের পরিবার দাবি করেছে। তাকে বাড়ি থেকে নেওয়া রতনও বিবিসি বাংলার কাছে স্বীকার করেছেন যে, সুস্থ অবস্থায় ভবেশ রায় তাদের সঙ্গে বেরিয়েছিলেন।

তবে ভবেশের স্ত্রী সান্তনা রানীর প্রশ্ন, সুস্থ মানুষ কেন লাশ হয়ে ফিরল?

"সুস্থ্যভাবেই গেল বাড়ি থেকে। অসুস্থ বা দুর্বল ছিল না। রোগে পড়া সেটাও না। কোনও সমস্যা নাই। যখন তাকে নিয়ে যায়, তখনতো অতটা সন্দেহ করি নাই। আমার বাড়িওয়ালাতো বেড়ায়। নিয়ে গিয়ে মারিবে এটা সন্দেহ থাকিলেতো যাবারই দিইনা। সুস্থ স্বামীটা নি গেয়, কীভাবে একবারে লাশ হিসেবে ঢুকে?"

ভবেশকে নিয়ে কোথায় গেলেন

ঘটনার দিন ভবেশ রায়সহ পাঁচজনের দলটি কোথায় কোথায় গেলেন, কী করলেন- এ প্রশ্ন অনেকের। আতিক ও রতন বিবিসিকে জানিয়েছেন, প্রথমে তারা পাঁচজন পাশ্ববর্তী ফুলবাড়ি হাটে কিছুক্ষণ গল্প করেন। আতিক ফুলবাড়ী থেকেই ভবেশের সঙ্গী হন।

তারা ফুলবাড়ী থেকে দেড় কিলোমিটারের মত দূরে গগনপুর মোড়ে ৪০-৪৫ মিনিট আড্ডা দিয়েছিলেন। সেখানে ভবেশ রায় ঝালমুড়ি ও পেঁয়াজু খেয়েছিলেন বলে দাবি করেন আতিক। তার বর্ণনা অনুযায়ী, গগনপুর থেকে সবাই মিলে নাড়াবাড়ি বাজারে যান সাতটা নাগাদ। নাড়াবাড়ি বাজারে গিয়ে প্রথমে চা, সিগারেট এবং পান খেয়েছেন। পান চাবাতে চাবাতে ভবেশ রায় ঘামতে শুরু করেন। সেখানেই ভবেশ রায় অসুস্থ হয়ে পড়েন।

বাজারে অনেক লোকের মধ্যে এই ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে আতিক বলেন, "যখন দেখতেছি বেশি ঘামতেছে, শরীর ঠাণ্ডা হচ্ছে, তখন ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম আমরা। ডাক্তার বলতেছে, প্রেসার ওনার একবারে জিরো। ডিম খাওয়াইলো, চিনি খাওয়াইলো, স্যালাইন খাওয়াইলো। খাওয়ার পরে দেখে যে প্রেসার কোনও রকম ঠিক হয় না।

"তখন ডাক্তার বলতেছে যে এই রুগির সমস্যা। আপনারা সামনে চেম্বার আছে, ওখানে নিয়ে যান। পরে আমরা রহমান ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। তার ছেলে চেকাপ করে বলে এই রুগি স্ট্রোক করছে" এ ভাবেই ভবেশের অসুস্থ হওয়ার ঘটনার বর্ণনা দেন আতিক।

নাড়াবাড়ী বাজারে চায়ের দোকানদার, পান বিক্রেতা, ফার্মেসি এবং পল্লী চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে ভবেশ রায়ের বাজারে উপস্থিতি এবং অসুস্থতার বিষয়টি নিয়ে সবাই মোটামুটি একইরকম বক্তব্য দিয়েছেন।

ওই বাজারে চায়ের দোকানদার অহিদুল ইসলাম ও তার ছেলে দুলাল দুজনই উপস্থিত ছিলেন সেদিন। তাদের দোকানে ভবেশসহ সকলে একত্রে চা পান করেছিলেন। অহিদুলের ভাষ্য অনুযায়ী, সন্ধ্যা সাতটার পরে প্রথমে দুজনএসে দুই কাপ চা নিয়েছিলেন। পরে আরো তিনজন তিনকাপ চা নিয়ে একসঙ্গে পান করেন।

"সুস্থ অবস্থায় এখানে এসে চা খেয়েছে। শরীরের ভেতরে কী তো জানি না। এরপর সিগারেট খেয়েছে। পাশের দোকান থেকে পান খেয়ে মাথা ঘুরেছে, তারপর ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছে। এ পর কী হয়েছে জানি না।" বলছিলেন চা বিক্রেতা অহিদুল ইসলাম।

অসুস্থতার প্রশ্নে পান বিক্রেতা

পান বিক্রেতা মো: মতিবুর রহমান জানান, ভবেশ রায়কে না চিনলেও অসুস্থতার কারণে তার ঘটনাটি স্পষ্ট স্মরণ রয়েছে। তার কাছ থেকে কাচা সুপারি, কালোজিরা, খয়ের ও চুন মিশিয়ে একটি পান কিনে খেয়েছিলেন ভবেশ রায়। এর কিছুক্ষণ পরে তিনি বাজারের একটি পিলারে পাশে বসে পড়েন। তখন প্রচণ্ড ঘামতে থাকেন।

শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সঙ্গীরা পান দোকানের বিশ গজের মধ্যেই থাকা একটি ফার্মেসিতে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। ফার্মেসিতে লিটন নামে যিনি ছিলেন, তিনি প্রেসার মেপে দেখেন প্রেশার একদম নেই। তারপর তাকে একটি স্যালাইন দিয়ে বলেন. 'এই রোগী আমার আয়ত্বের বাইরে আপনারা রহমান ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান'।

লিটন জানান, ভ্যানে করে তার ফার্মেসি থেকে ভবেশ রায়কে নিয়ে যাওয়া হয়। তার কাছে থাকাকালীন ভবেশ রায়ের পরিবারের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করতে দেখেননি লিটন। কোন সময়ের ঘটনা জানতে চাইলে, তখন এশার আজান দিয়েছিল বলে জানান লিটন।

তবে আতিক যে ডিম, চিনি খাওয়ানোর দাবি করেন, সেটি তার সামনে হয়নি বলে দাবি করেন লিটন। তবে এক প্যাকেট স্যালাইন তিনি দিয়েছিলেন বলে বিবিসিকে জানান।

লিটনের ফার্মেসি থেকে একই বাজারে পল্লী চিকিৎসক রহমান ডাক্তারের চেম্বারের দূরত্ব পাঁচশ গজের মধ্যেই। রহমান ডাক্তারের ছেলে মো: সোহেল রানা জানান, তিনি দেখেন ভবেশ রায় প্রচণ্ড ঘামছিল এবং তার শরীর একেবারে ঠাণ্ডা। সেখানে তার বমি হয়েছিল।

রাত আটটার দিকে ভবেশ রায়কে সবশেষ পরীক্ষা করে দেখেছিলেন পল্লী চিকিৎসক সোহেল রানা। তিনি জানান, রোগীর কী সমস্যা জানতে চাইলে সঙ্গে থাকা ব্যক্তিরা জানান রোগীর প্রেসার লো তিনটা মেডিসিন খাইছে, একটা ম্যাক্সপ্রো, ওমিডন আর একটা বমির ট্যাবলেট।

"রোগী জীবিত ছিল। জিহ্বা বের করতে বললাম বের করলো। কিন্তু যেহেতু প্রেসার মেপে রিডিং পাইনি, তাই কোনও চিকিৎসা না দিয়ে তাদেরকে মেডিকেলে নেয়ার পরামর্শ দেই। পরে তারা ভ্যানে করে নিয়ে যায়।"

কখন খবর দেওয়া হয় পরিবারকে

স্থানীয় নাড়াবাড়ী বাজারে ফার্মেসি এবং পল্লী চিকিৎসকের কাছে নেয়ার মাঝে ভবেশের ছেলে স্বপন চন্দ্র রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন রতন। তার বাবা মারাত্মক অসুস্থ এবং হাসপাতালে নেওয়া দরকার বলে জানানো হয়।

স্বপন রায় জানান, তার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল এবং তার বাবাকে হাসপাতালে নেওয়ার কথা বললে তিনি বলেন মটরসাইকেলে করে নিয়ে আসেন। তখন বলা হয় বসার মত অবস্থা নাই। ওনার প্রেসার একেবারে জিরো উনি বসে থাকতে পারতেছে না। তখন আমি বলি তাহলে আপনারা বসেন কোথাও বাতাস করেন আমি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসতেছি।

অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে দিনাজপুর থেকে আসতে থাকে স্বপন। আর নাড়াবাড়ী বাজার থেকে ভ্যানে তুলে আতিক রতনসহ চারজন ভবেশকে নিয়ে আসে ফুলবাড়ী হাটে। সেখানে ভবেশের স্ত্রী স্থানীয় বাজারের দোকানিরা দেখেন ভবেশ রায়কে দুজন দুদিক থেকে দুহাত ধরে রেখেছে। তার চোখ বন্ধ এবং অচেতন।

অসুস্থ ভবেশ রায়কে ভ্যানে করে যখন ফুলবাড়ী বাজারে নিয়ে আসা হয়, তখন তার জ্ঞান ছিল না বলে জানান পরিবার ও স্থানীয়রা। এই বাজারে কৃষ্ণ নামের আরেকজন ডাক্তার ভবেশ রায়ের প্রেসার মেপেছিলেন। ফুলবাড়ী হাট ভ্যানের ওপর ভবেশ রায়কে দেখেছেন স্থানীয় দোকানদার মো. আবছার। তিনি ভবেশের হাতে তেল মালিশ করেছিলেন বলে জানান।

আরেকজন দোকানদার আজিজুল ইসলাম জানান, তার দোকানের সামনেই ভবেশকে নিয়ে আসা ভ্যানটি অবস্থান করছিল। তিনি দেখেছেন ওই সময় ভবেশ রায়ের মুখ থেকে ফেনার মত লালা ঝরছিল। এগিয়ে গিয়ে আজিজুল টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে দিয়েছিলেন বলে জানান।

ফুলবাড়ী আসার পর ভবেশ রায়ের চোখ বন্ধ ছিল। যখন অ্যাম্বুলেন্সে ওঠানো হয়, তখন মলমূত্র ত্যাগ করেছিলেন বলেও উল্লেখ করেন দোকানদার আজিজুল ইসলাম। সেখানে ভবেশ রায়ের সঙ্গে ভ্যানচালক সহ চারজন ছিলেন। এরমধ্যে তিনজন শুরু থেকে তার সঙ্গী ছিলেন বলে নিশ্চিত করেন আজিজুল।

আজিজুল বলেন, "ওদের হাসপাতালে যাওয়ার দরকার ছিল ওরা যায় নাই।"

ভবেশের সঙ্গীদের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ এনেছেন তার পরিবার এমনকি স্থানীয়রা।

স্থানীয় ফুলবাড়ী হাটের ব্যবসায়ী এবং একই ইউনিয়নের বাসিন্দা মো: আবছার বলেন, "যাওয়ার সময় মটরসাইকেলে নিয়ে গেল। দুইটা মটরসাইকেল। ওখানে অসুস্থ হয়ে গেল। ওরাকি পারতো না মটরসাইকেলে করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে।"

একই রকম অভিযোগ ভবেশের ছেলে স্বপন রায়েরও। তিনি বলেন ভবেশের মৃত্যুর পর তিনদিন হলেও সঙ্গীদের কেউ বাড়িতে আসেনি। স্বান্তনা দেয়নি। কোনও ফোন কলও করেনি।

মো: আবছার স্বপন রায়ের সঙ্গে মামলা করতে থানায় গিয়েছিলেন। ভবেশের শোকাহত পরিবারকে নানারকম সহযোগিতা করতেও দেখা গেছে।

বিবিসি বাংলাকে আবছার বলেন, 'যেহেতু ঘটনা নিয়ে ভারত বিবৃতি দিছে। পোস্ট মর্টেম হয়েছে। তার সঙ্গে কী ঘটনা ঘটেছে, এটা বের হওয়া দরকার।'

যেসব সন্দেহে হত্যা মামলা

ভবেশ চন্দ্র রায়ের রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ এবং অবিশ্বাস থেকে হত্যা মামলা করেছে তার পরিবার। ভবেশের পরিবারের দাবি, মরদেহের ঘাড়ের নিচে একটি ফোলা জায়গা তাদের দৃষ্টিতে এসেছে, যেটিকে আঘাতের চিহ্ন বলেই তাদের ধারণা।

ভবেশ রায়ের ছেলে স্বপন রায় বিবিসিকে বলেন, "বাড়ি থেকে এসে যেহেতু ওরা ডেকে নিয়ে গেছে পরিকল্পনামাফিক নিয়ে গেছে। মৃত্যুটা স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। আসলে কী ঘটেছে? আমার বাবার সাথে কেন ঘটলো। সুস্থ মানুষটা দুই তিন ঘণ্টার মধ্যে হঠাৎ করে মৃত্যু হবে, এটাতো মেনে নেবার মতো নয়।"

স্বপন রায় বলেন, যেহেতু আমাদের বাজার থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরের বাজারে নিয়ে গেছে, নিশ্চয় কোনো ঘটনা আছে। ঘাড়ের কাছে যেহেতু ফোলা দাগ ছিল নিশ্চই হাত দিয়ে বা লাঠি দিয়ে প্রয়োগ করা হয়েছে কোনও কিছু, যার জন্য ওটা ফুলে ছিল।"

বাড়ী থেকে বের হয়ে সন্ধ্যার আগে তারা কোথায় গিয়েছিলেন, সেটি নিয়ে সন্দেহ আছে অনেকের। ভবেশকে যারা নিয়ে যায়, তাদের বিরুদ্ধে নেশা করার একটা অভিযোগ রয়েছে। ভবেশ রায়ের স্ত্রীর ভাষায় তারা 'খোর'।

সন্ধ্যায় নাড়াবাড়ি বাজারে যাওয়ার আগে কোথায় ছিলেন, সে বিষয়টি পুরোপুরি পরিস্কার নয়। আতিক ও রতনের দাবি অনুযায়ী, গগনপুর থেকে তারা নাড়াবাড়ী গিয়েছিলেন। কিন্তু সাড়ে পাঁচটা থেকে সাতটা বা সোয়া সাতটা পর্যন্ত সময়টায় তারা কী কী করেছিলেন, কোথায় গিয়েছিলেন- সে বিষয়ে তদন্ত প্রয়োজন বলে অনেকে মনে করেন।

নাড়াবাড়ী বাজারে চায়ের দোকানে যাওয়ার আগে হক্কানী নামের এক ব্যক্তির টিভির দোকানে তারা গিয়েছিলেন বলেও আলোচনায় আছে।

এছাড়া ভবেশ রায়কে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রেখে কীভাবে সবাই চলে গেল- সেই প্রশ্ন তুলেছে ভুক্তভোগীর পরিবার এবং স্থানীয়রা।

মৃত্যুর খবর পেয়ে তারা গা ঢাকা দিয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠেছে। ভবেশ রায় দীর্ঘদিনের পরিচিত তাকে নিয়ে যাওয়ার পর মৃত্যু হলেও পরিবারের সঙ্গে সৎকার এবং তার পরে তিনদিনেও কোনও যোগাযোগ না করাটা সন্দেহের চোখে দেখছেন অনেকে।

সান্তনা রানী বলেন, "অসুস্থ হইছে ঠিকাছে মেডিকেলে নিবেনা? চিকিৎসা করবে না। শত্রু হলেও তো চিকিৎসা করা যায় নাকি"?

এছাড়া ভবেশ রায়ের সঙ্গে আতিক ও রতনের আর্থিক লেনদেন থাকার একটি বিষয় সামনে আনছে পরিবার। ভবেশ রায়ের স্ত্রী সান্তনা রানী জানান, রতনের সঙ্গে কোনো লেনদেন নাই। তবে আতিকের সাথে লেনদেন ছিল। তার স্বামী ২৫ হাজার টাকা নিয়েছেন এবং মাসে মাসে তিন হাজার ২৫০ টাকা কিস্তি পরিশোধ করতেন। তবে তাদের কোনও কিস্তি বকেয়া নেই বলেও উল্লেখ করেন সান্তনা রানী।

"৫ তারিখে যদি টাকা না দিই। ছয় সাত তারিখ যদি যায়, বিরাট হুমকি দেবে। তোর গাড়ি নিয়ে যাচ্ছি, টর্চার করমো বারিত। এরকম করে আতিক।"

আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি নিয়ে একটা সন্দেহের কারণ উল্লেখ করে ভবেশ রায়ের ছেলে জানান, তাদের এক প্রতিবেশিকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে একই গ্রুপ ত্রিশ হাজার টাকা দাবি করার পর জোরজবরদস্তি করেছেন।

"তারা ভাল মানুষ নয়। মাদক সেবন করে। মানুষকে টাকা দেয় সুদে। অল্প টাকা দিয়ে জোরপূর্বক বেশি টাকা আদায় করে।"

অভিযুক্ত আসামী মো: রতন ইসলাম এবং মো: আতিকুর ইসলাম দুজনই দাবি করেছেন, ভবেশ রায়কে কোনও প্রকার আঘাত করা কিংবা মারধর করা হয়নি। তাদের সঙ্গে ভবেশ চন্দ্র রায়ের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বলেও দাবি তাদের।

এই মৃত্যুকে পূঁজি করে একটি চক্র তাদের ফাঁসাতে চাইছে বলে উল্টো অভিযোগ করেন ওই দুজন।

ভবেশ রায়কে দ্রুত কেন চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাননি বা পরিবারের সঙ্গে কেউ দেখা করেননি, এ প্রশ্নে আতিক বলেন, নাড়াবাড়ী বাজারে কোনও যানবাহন ছিল না। আর হাসপাতালে না যাবার কারণ তাদের তাদের কাপড় পরিবর্তনের প্রয়োজন ছিল। হাসপাতালে যাওয়ার সুযোগ হয়নি।

এছাড়া ভবেশ রায়ের চিকিৎসার জন্য কালবিলম্ব করেননি বলেও দাবি করেছেন অভিযুক্ত আতিক ও রতন।

আতিক বলেন, "আমরা কোনও সময় লস করিনি। দুই ডাক্তার দেখছে। ওই সময়টুকুই। এরমধ্যে আমরা তার ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করি। উনি আমাদের বন্ধু। ওনার ক্ষতি করবো, এরকম মানুষ আমরা না।"

রহস্যজনক এই মৃত্যু নিয়ে পরিবার ও এলাকাবাসীর নানা প্রশ্ন রয়েছে। বিরল থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুস সবুর জানান, মৃত্যুর পর সুরতহাল করে ভবেশ রায়ের শরীরে তেমন কোনো মারধর বা জখমের চিহ্ন দেখতে পাননি।

তিনি উল্লেখ করেন, মরদেহের পোস্টমর্টেম করা হয়েছে, ফরেনসিক রিপোর্টে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।