
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থি ডিনদের অফিসে তালা দিলেন শিক্ষার্থীরা। ছবি : এনটিভি
মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছয়জন আওয়ামীপন্থি ডিন স্বপদে বহাল থাকার অভিযোগকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের অপসারণের দাবিতে আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) বেলা ১২টায় শিক্ষার্থীরা ডিনস কমপ্লেক্সে গিয়ে সংশ্লিষ্ট ডিনদের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন।
এ সময় তাদের ডিনস কমপ্লেক্স এর সামনে জমায়েত হয়ে ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম, সংগ্রাম’, ‘আওয়ামী লীগের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘আওয়ামী লীগের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’, ‘আওয়ামী ডিনদের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
রাকসুর সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক জায়িদ হাসান জোহা বলেন, ‘আমরা চাই না আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠুক, আবার আমাদের কাদে চড়ে বসুক। আমরা যারা এটা চাই না তারা আজকে একত্রিত হয়েছি। আওয়ামীপন্থি যে ছয়জন ডিন রয়েছে, আমরা যদি নৈতিকতার খাতিরে বলি তাহলে তাদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে আমরা কিছু বলিনি। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তারা কোনোভাবে এই পদগুলোতে থাকার যোগ্যতা রাখে না। এটা জুলাই বিপ্লবের সাথে গাদ্দারি, জুলাইয়ের রক্তের সাথে বেইমানি’।
তালা ঝুলিয়ে রাবি সিনেট সদস্য আকিল বিন তালেব বলেন, ‘জুলাই পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পাসে যে পরিবর্তন ও তথাকথিত বিপ্লবী প্রশাসন গঠিত হয়েছিল, তাদের কাছে আমরা বারবার আমাদের উদ্বেগের বিষয়গুলো তুলে ধরেছি। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা সংকটসহ নানা সমস্যার কথা জানালেও জুলাইয়ের সেই চেতনা ও স্পিরিটকে বাস্তবে লালনের ক্ষেত্রে আমরা সঙ্গতিপূর্ণ উদ্যোগ দেখতে পাইনি। জুলাইয়ের অন্যতম শক্তি হাদি ভাইকে যেভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তা আমাদের গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। আমরা স্পষ্টভাবে দেখছি, এসব ঘটনার সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা জড়িত এবং তাদেরকে ভারতের ভেতরে আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে।
আকিল বিন তালেব আরও বলেন, এখনও পর্যন্ত আমরা লক্ষ্য করছি, আওয়ামীপন্থি অনেক ব্যক্তি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল রয়েছেন, এমনকি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েও তাদের উপস্থিতি রয়েছে। সিনেট কার্যকর না হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এখনো সিন্ডিকেট দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, আর সেই সিন্ডিকেটের সদস্যই আমাদের বর্তমান ডিন। বর্তমানে ছয়জন ডিন রয়েছেন যারা আওয়ামীপন্থি ও তারা নিজ নিজ পদে থেকে দলীয় অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের যে বিচার হওয়া প্রয়োজন ছিল, এই প্রশাসন তা করতে ব্যর্থ হয়েছে— আর এর অন্যতম বড় কারণ হিসেবে আমরা এই আওয়ামীপন্থি ডিনদের ভূমিকার কথাই তুলে ধরছি।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ ডিসেম্বর এইসব আওয়ামীপন্থি ডিনদের মেয়াদ শেষ হয়৷ এরই প্রেক্ষিতে রাবি রেজিস্ট্রার বলেছিলেন যে, সামনে ভর্তি পরীক্ষার জন্য ডিনদের নির্বাচন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এক বছর যেহেতু রাখতে পেরেছি, আর কিছুদিন রাখলেও সমস্যা হবে না। এই মন্তব্যের জেরে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেন শিক্ষার্থীরা। রাকসু জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার তাদের পদত্যাগের জন্য আল্টিমেটাম দেন। এরই প্রেক্ষিতে আজ শিক্ষার্থীরা তাদের সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে আসেন। এনটিভি