
কোনো ধরনের ফলাফল ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় ইউক্রেন ও মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে চলতে থাকা তিন দিনব্যাপী শান্তি আলোচনা শেষ হয়েছে। এদিকে, আলোচনার শেষ দিন শনিবার (৬ ডিসেম্বর) ইউক্রেনের বিভিন্ন শহর ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো লক্ষ্য করে আকাশপথে বেশ বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। খবর কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরার।
ফ্লোরিডায় গতকাল শনিবারের আলোচনার দিনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তার সঙ্গে টেলিফোনে মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ ও জারেড কুশনারের ‘গঠনমূলক’ কথা হয়েছে। তবে দুপক্ষই একটি বিষয়ে একমত, সত্যিকারের শান্তি প্রতিষ্ঠায় অর্থপূর্ণ অগ্রগতির জন্য মস্কোর ইচ্ছার ওপর পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে।
আলোচনায় কূটনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তবতা তুলে ধরা হয়, যেখানে দেখা যাচ্ছে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলজুড়ে অগ্রসর হচ্ছে রুশ বাহিনী। শুক্রবার ভোররাত থেকে ইউক্রেনে নতুন করে ব্যাপক আক্রমণ শুরু করে রাশিয়া। এই হামলায় রাশিয়া ৬৫৩টি ড্রোন ও ৫১টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামো ও গুরুত্বপূর্ণ সামরিক-বেসামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে।
হামলায় মোট ২৯টি এলাকায় আঘাত হানা হয় বলে নিশ্চিত করেন ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইহর ক্লাইমেনকো। তিনি জানান, এতে কমপক্ষে আটজন আহত হয়েছে। হামলায় জাপোরিজিয়া পারমাণবিক ক্ষেত্রের বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং সেখানকার রিঅ্যাক্টরের নিরাপত্তা নিয়ে তৈরি হয় শঙ্কা। এই পারমাণবিক অবকাঠামোর বন্ধ হয়ে যাওয়া ছয়টি রিঅ্যাক্টরকে ঠান্ডা রাখতে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রয়োজন। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অভিযোগ করেন, সর্বশেষ হামলায় জ্বালানি অবকাঠামোকে প্রধান লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজধানী কিয়েভের কাছে একটি রেলস্টেশন ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। ইউক্রেনের বিমানবাহিনী জানিয়েছে, তারা ৫৮৫টি ড্রোন ও ৩০টি ক্ষোপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে।
মস্কো থেকে অবশ্য জানানো হয়েছে, হামলায় কেবল ইউক্রেনের সামরিক-বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স ও সেগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা জ্বালানি অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার অগ্রগতির কারণে এখন কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠায়। কেবল নভেম্বর মাসেই রাশিয়ার সৈন্যরা ইউক্রেনের দোনেৎস্ক অঞ্চলের ‘লজিস্টিক হাব’ হিসেবে পরিচিত পোকরোভস্কের ৫০৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করে নিয়েছে। এই ভূখণ্ড দখলের পরিমাণ অক্টোবরের প্রায় দ্বিগুণ।
গত মঙ্গলবার মস্কোতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত উইটকফ ও কুশনার। এরই ধারাবাহিকতায় ফ্লোরিডার মায়ামিতে আলোচনায় বসে মার্কিন ও ইউক্রেনের কূটনীতিকরা। তবে সেই আলোচনা কোনো সুনির্দিষ্ট ফলাফল ছাড়াই শেষ হয়েছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, ইউক্রেনের ভূখণ্ড নিজেদের করার দাবি থেকে তিনি পিছিয়ে আসবেন না। এ লক্ষ্যে তিনি রুশ বাহিনীকে শীতকালীন যুদ্ধ চালানোর প্রস্তুতি নিতে বলেছেন।