১৩ অক্টোবর মিসরের লোহিত সাগরের অবকাশ যাপনকারী শহর শার্ম আর-শেখে গাজা সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বক্তব্য রাখছেন। ছবি: এএফপি
গাজায় ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের পরও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে বীরের সম্মান পেয়েছেন। ইসরায়েল ও মিসর সফরকালে তিনি গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি উদযাপন করেন এবং নিজেকে এ শান্তি প্রতিষ্ঠার নায়ক হিসেবে তুলে ধরেন।
সোমবার (১৩ অক্টােবর) ইসরায়েলি পার্লামেন্ট ‘কনেসেট’-এ ভাষণ দেওয়ার পর ট্রাম্প মিসরের শার্ম আল-শেখে যান। সেখানে তিনি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নেতাদের সঙ্গে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
ট্রাম্প দাবি করেন, তার নেতৃত্বেই গাজায় যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটেছে—যেখানে প্রায় ৬৮ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। খবর আল জাজিরার।
নিচে ট্রাম্পের বক্তব্যের পাঁচটি মূল দিক তুলে ধরা হলো—
১. ‘নতুন মধ্যপ্রাচ্য’ শুরু হয়েছে
ট্রাম্প ঘোষণা দেন, গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে “সন্ত্রাস ও মৃত্যুর যুগের অবসান” ঘটেছে।
তিনি বলেন, “এটি বিশ্বাস, আশা ও ঈশ্বরের যুগের সূচনা—ইসরায়েল এবং সমগ্র অঞ্চলের জন্য এক মহৎ ঐক্যের সূর্যোদয়।”
তবে মানবাধিকারকর্মীরা সতর্ক করেছেন, দখলদারিত্ব ও নিপীড়ন অব্যাহত থাকলে কোনো স্থায়ী শান্তি আসবে না।
২. নেতানিয়াহুর জন্য ‘ক্ষমা’ চাইলেন ট্রাম্প
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রশংসায় পঞ্চমুখ ট্রাম্প কনেসেটে প্রকাশ্যে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজাক হারজগকে অনুরোধ করেন, যেন তিনি নেতানিয়াহুকে দুর্নীতির মামলায় ক্ষমা করে দেন।
তিনি রসিকতা করে বলেন, “সিগার আর শ্যাম্পেন—এসব নিয়ে মাথা ঘামাবেন না।”
ট্রাম্প বলেন, নেতানিয়াহু “যুদ্ধকালীন এক মহান নেতা”, যিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহু উন্নত অস্ত্র চাইতেন এবং “আমরা অনেক দিয়েছি।”
৩. আন্তর্জাতিক চাপের স্বীকৃতি
যদিও ট্রাম্প নেতানিয়াহুর প্রশংসা করেছেন, তিনি স্বীকার করেছেন যে গাজার নৃশংসতার কারণে বিশ্বজনমত এখন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে।
ট্রাম্প বলেন, “বিশ্ব বড় এবং শক্তিশালী, শেষ পর্যন্ত বিশ্বই জয়ী হয়।”
ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, যুদ্ধ টেনে না নিয়ে “বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বিজয় নেওয়ার সময় হয়েছে।”
৪. ফিলিস্তিনিদের প্রতি ‘বার্তা’
ট্রাম্পের বক্তব্যে ফিলিস্তিনিদের জন্য খুব সংক্ষিপ্ত অংশ ছিল। ট্রাম্প বলেন, “এখন ফিলিস্তিনিদের সময় এসেছে সহিংসতার পথ ছেড়ে স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা, মর্যাদা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেওয়ার।”
তবে তিনি ইসরায়েলের গণহত্যা, দখল বা নিপীড়নের কথা স্বীকার করেননি। বরং দাবি করেন, “ফিলিস্তিনিদের সমস্যা ঘৃণার কারণে, দখলদারিত্বের কারণে নয়।”
৫. ইরান প্রসঙ্গে ‘দ্বৈত বার্তা’
ট্রাম্প দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি “ধ্বংস হয়ে গেছে” এবং ইসরায়েল ইরানের সামরিক ও বৈজ্ঞানিক নেতৃত্বকে “নিষ্ক্রিয় করেছে।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, “গাজা ও ইরান আর কোনো অজুহাত নয়—এখন সবকিছুই শান্তির দিকে যাচ্ছে।”
তবে একইসঙ্গে তিনি ইঙ্গিত দেন, ইরানের সঙ্গে আলোচনার দরজা খোলা রাখতে চান। ট্রাম্প বলেন, “তারা যখন প্রস্তুত হবে, আমি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে চাই।”