News update
  • Arab-Islamic Summit yields limited action over Israeli strike on Doha     |     
  • National Consensus Commission term extended till October 15     |     
  • EU Helping BD prepare for free, fair elections: Envoy Miller     |     
  • Chandpur’s century-old municipal clinic closes: Poor in peril     |     
  • Israeli Aggression against Qatar, Extension of Crimes against Palestine     |     

ভারত কেন এখন তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগ গড়তে আগ্রহী?

বিবিসি নিউজ কুটনীতি 2025-01-20, 10:02am

eewewqeqweq-a8229da3e5a581f9c38e744dc55408041737345735.jpg




আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে ভারতের সাম্প্রতিক কূটনৈতিক উদ্যোগের বিশেষ অর্থ রয়েছে। ওই প্রচেষ্টা ইঙ্গিত দেয় ওই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতাকে ভারত যেভাবে দেখছে, সেখানে একটা উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে।

তালেবানদের কাছে কাবুলের পতনের তিন বছরেরও বেশি সময় পর ভারতের এই সাম্প্রতিক পদক্ষেপ।

আফগানিস্তান তালেবান শাসনে চলে আসার ফলে কৌশলগত ও কূটনৈতিক দিক থেকে বড়সড় ধাক্কা খেয়েছিল ভারত। সেই সময় সামরিক প্রশিক্ষণ, বৃত্তি এবং নতুন সংসদ নির্মাণের মতো যুগান্তকারী প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে আফগানিস্তানে দুই দশক ধরে চলা ভারতের ব্যাপক বিনিয়োগ মুহূর্তে শেষ হয়ে যায়।

কাবুলের সেই পতন ওই অঞ্চলে পাকিস্তান ও চীনের বৃহত্তর প্রভাবের পথও প্রশস্ত করে দেয়। এর ফলে সেখানে ভারতের কৌশলগত ভিত্তি দুর্বল হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সুরক্ষা সংক্রান্ত উদ্বেগও নতুনভাবে তৈরি হয়।

তবে গত সপ্তাহে এই পরিস্থিতি বদলের একটা ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। দুবাইয়ে ভারতের শীর্ষ কূটনীতিক বিক্রম মিশ্রি তালেবানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। কাবুলের পতনের পর এই সাক্ষাৎকে দুই পক্ষের তরফে সর্বোচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে তালেবান ভারতকে "গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক শক্তি" হিসেবে উল্লেখ করেছে।

জানা গেছে, ওই বৈঠকে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল চাবাহার বন্দর যা পাকিস্তানের করাচী ও গোয়াদর বন্দরকে পাশ কাটানোর জন্য তৈরি করছে ভারত।

এখন প্রশ্ন হলো এই সাম্প্রতিক বৈঠকের গুরুত্ব কতটা?

এর উত্তরে আমেরিকান থিংক-ট্যাঙ্ক উইলসন সেন্টারের মাইকেল কুগেলম্যান বিবিসিকে বলেছেন, ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে তালেবান নেতৃত্ব যে বৈধতা চেয়ে এসেছিল, দিল্লি এখন তা দিয়ে দিয়েছে।

মাইকেল কুগেলম্যানের কথায়, "এই পদক্ষেপ এমন একটা দেশের পক্ষ থেকে এসেছে যার সঙ্গে এর আগে তালেবানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল না এবং এটাই এই পুরো বিষয়টাকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে। তালেবানের জন্য এটা একটা কূটনৈতিক বিজয়ও বটে।"

আফগানিস্তান তালেবানের ক্ষমতায় চলে যাবার পর থেকে সে দেশে মানবাধিকার ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ দেখা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। এই আবহে তালেবান সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পৃক্ততার ভারসাম্য বজায় রাখতে বিভিন্ন পন্থা নিয়েছে ভিন্ন ভিন্ন দেশ।

উদাহরণস্বরূপ, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থের কথা মাথায় রেখে তালেবান সরকারের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সম্পর্ক রেখেছে চীন। এমনকি সে দেশে চীনের একজন একজন রাষ্ট্রদূতও রয়েছে।

এখনও পর্যন্ত কোনও দেশই তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি না দিলেও ৪০টা দেশ কোনও না কোনওভাবে তালেবান সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ বা অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক রেখেছে।

ঠিক সেই কারণেই আফগানিস্তানে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত জয়ন্ত প্রসাদের মতো বিশেষজ্ঞরা ভারতের এই সাম্প্রতিকতম পদক্ষেপের বিষয়ে বিশেষ সতর্ক।

তিনি জানিয়েছেন, গত তিন বছর ধরে ফরেন সার্ভিস কূটনীতিকের মাধ্যমে তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে ভারত। ১৯৯০-এর দশকে গৃহযুদ্ধের সময় ভারত আফগানিস্তানে তার কনস্যুলেটগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল এবং যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে ২০০২ সালে তা আবার চালু করেছিল।

জয়ন্ত প্রসাদের কথায়, "আমরা চাইনি ওই বিরতি (আবার) ঘটুক। তাই আমরা যোগাযোগ গড়তে চেয়েছি। খুব সহজভাবেই এটা সম্পর্কের একটা ধাপ।"

ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তানের বন্ধন "ঐতিহাসিক এবং সভ্যতার বন্ধন"। ভারতের পার্লামেন্টে গত বছর এমনটাই মন্তব্য করেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

আফগানিস্তান জুড়ে রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ লাইন, বাঁধ, হাসপাতাল ও ক্লিনিকসহ ৫০০টারও বেশি প্রকল্পে ভারত ৩০০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ বিনিয়োগ করেছিল। আফগান কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, হাজার হাজার ছাত্রকে বৃত্তি প্রদান থেকে শুরু করে নতুন সংসদ ভবনও নির্মাণ করেছিল।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "রাজতন্ত্র, কমিউনিস্ট বা ইসলামপন্থী- কাবুলের শাসনের ধরন যাই হোক না কেন, দিল্লি ও কাবুলের সম্পর্কে একটা স্বাভাবিক উষ্ণতা থেকেছে।"

সেই অনুভূতির কথা মি. কুগেলম্যানের মন্তব্যে প্রতিধ্বনিত হয়েছে। তার কথায়, "আফগানিস্তানে উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তার দাতা হিসাবে ভারতের একটা গুরুত্বপূর্ণ উত্তরাধিকার রয়েছে, যা আফগান জনগণের কাছে (ভারতকে) শুভাকাঙ্ক্ষী বলে তুলে ধরেছে। দিল্লি এটা হারাতে চায় না।"

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে দিল্লির সঙ্গে তালেবানের সম্পর্ক সহজ হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। পাকিস্তানের দাবি, কট্টরপন্থী পাকিস্তানি তালেবান (টিটিপি) আফগানিস্তান থেকে তৎপরতা চালায়।

গত জুলাই মাসে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বিবিসিকে জানিয়েছিলেন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার লক্ষ্যে একটি অভিযানের অংশ হিসাবে আফগানিস্তানে হামলা অব্যাহত রাখবে পাকিস্তান।

ভারত ও তালেবানের বৈঠকের কয়েকদিন আগে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে পাকিস্তানি বিমান হামলায় বহু মানুষ নিহত হয়েছে বলে আফগান সরকার জানিয়েছে। তালেবান সরকার এই হামলাকে তাদের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন বলে নিন্দা করেছে।

২০২১ সালে কাবুলের পতনের পর থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের সম্পর্কের তীব্র অবনতি ঘটেছে।

অথচ আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর বিদেশি অতিথিদের মধ্যে প্রথম ছিলেন একজন শীর্ষ পাকিস্তানি গোয়েন্দা কর্মকর্তা। তালেবান নেতৃত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন তিনি।

সে সময় অনেকেই কাবুলের পতনকে ভারতের জন্য কৌশলগত ধাক্কা হিসেবে দেখেছিলেন।

মি. কুগেলম্যান বলেন, "তবে তালেবানের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ বাড়ানোর পিছনে একমাত্র কারণ কিন্তু পাকিস্তান নয়। তবে এটা ঠিক যে গুরুত্বপূর্ণ পাকিস্তানি সম্পদের কাছাকাছি যাওয়ার মধ্যে দিয়ে দিল্লি কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে তার চিরসবুজ প্রতিযোগিতায় একটা বড় জয় পেয়েছে।"

তবে তালেবানের সঙ্গে এই যোগাযোগ গড়ে তোলার নেপথ্যে আরও কিছু কারণ রয়েছে। ভারত মধ্য এশিয়ায় যোগাযোগ জোরদার করতে চাইলেও পাকিস্তান ট্রানজিট না দেওয়ায় (ভারত) সেখানে সরাসরি স্থলপথে পৌঁছাতে পারে না।

বিশেষজ্ঞদের মতে এই লক্ষ্যের চাবিকাঠি হলো আফগানিস্তান। এক্ষেত্রে একটা কৌশল হতে পারে চাবাহার বন্দর উন্নয়নে ইরানের সঙ্গে অংশীদারিত্ব। এর মাধ্যমে আফগানিস্তান হয়ে মধ্য এশিয়ায় প্রবেশাধিকার মজবুত করতে সক্ষম হতে পারে ভারত।

মি. কুগেলম্যান বলেন, "এই পরিকল্পনায় তালেবান নেতৃত্বের সঙ্গে আরও নিবিড় যোগাযোগ গড়ে তোলার মাধ্যমে আফগানিস্তানের দিকে মনোনিবেশ করাটা দিল্লির পক্ষে সহজ কাজ হবে। তারা ভারতের এই পরিকল্পনার পক্ষে কারণ এটা আফগানিস্তানের নিজস্ব বাণিজ্য ও সংযোগ বাড়াতে সহায়তা করবে।"

স্পষ্টতই, ভারতের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ তালেবান নেতৃত্বাধীন আফগানিস্তানে তার মূল স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করেছে।

ভারতের লক্ষ্য হলো দেশে সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকি রোধ, ইরান ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ স্থাপন, সহায়তা পাঠানোর মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে শুভাকাঙ্ক্ষী হিসাবে নিজের ভাবমূর্তি বজায় রাখা এবং পাকিস্তানের মোকাবিলা করা।

এই সম্পর্কে নেতিবাচক দিকগুলো কী কী?

মি. কুগেলম্যান বইলেছেন, "তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার ক্ষেত্রে প্রধান ঝুঁকি হচ্ছে তালেবান নিজেই। আমরা এমন এক সহিংস ও নৃশংস পক্ষের কথা বলছি, যার সঙ্গে পাকিস্তানিসহ আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং যারা ১৯৯০-এর দশক থেকে নিজেদের সংস্কারের কাজ খুব সামান্যই করেছে।"

বিষয়টাকে বিশদে ব্যাখ্যা করেছেন তিনি।

তার কথায়, "ভারত আশা করতেই পারে যে তালেবানের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক গড়ে তুললে তাদের (তালেবানের) তরফে ভারত বা তার স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করার সম্ভাবনা কমই থাকবে। সেটা সত্যিও হতে পারে।"

"কিন্তু দিনের শেষে তালেবানের মতো গ্রুপকে কি সত্যিই বিশ্বাস করা যায়? এই জটিল সম্পর্ককে সতর্কতার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় এই অস্থির প্রশ্নটাই সমানে ঘুরপাক খাবে।"

নারীদের প্রতি তালেবানের আচরণ নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের বর্তমান সম্পর্কের কোনো নেতিবাচক দিক দেখছেন না মি. প্রসাদ।

তিনি মনে করেন, "তালেবানরা পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে। তাদের নিজেদের মতো কাজ করতে দিলে আফগান জনগণের কোনও লাভ হবে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কিছু সম্পৃক্ততা তালেবান সরকারের উপর চাপ বাড়াবে তার আচরণ উন্নত করার জন্য।

"মনে রাখবেন, তালেবানরা স্বীকৃতির জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে, তারা জানে যে এটা (স্বীকৃতি) একমাত্র অভ্যন্তরীণ সংস্কারের পরেই ঘটবে।"

সেটা হতে পারে নারীদের জনজীবনে ফিরিয়ে আনা এবং তাদের শিক্ষা, কাজ ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার মতো পদক্ষেপের মধ্যে দিয়ে।