কিছুতেই ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না খুলনা অঞ্চলের পাটকলগুলো। প্রায় পাঁচ বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া এ অঞ্চলের রাষ্ট্রায়াত্ত ৯টি পাটকলের মধ্যে ইজারার মাধ্যমে চারটি সীমিত আকারে চলছে। বাকি পাটকলগুলো বেসরকারিভাবে চালুর উদ্যোগ নেয়া হলেও আগ্রহী হচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা।
এক সময় শ্রমিকদের আনাগোনায় ব্যস্ত আর কোলাহলে পূর্ণ থাকা খালিশপুরের প্লাটিনাম জুট মিলে গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে সুনসান নীরবতা। বেসরকারি মালিকানায় ইজারার মাধ্যমে খুলনা অঞ্চলের বন্ধ মিলগুলো চালুতে কয়েক দফায় টেন্ডার আহ্বান করা হলেও বিনিয়োগকারীদের খুব একটা সাড়া মিলছে না।
প্লাটিনাম জুট মিলের মতো একই অবস্থা স্টার জুট মিল এবং ক্রিসেন্ট জুট মিলেরও। শর্ত শিথিল করে বিভিন্ন মিলে ৬ থেকে ৭ দফা টেন্ডার আহ্বান করা হলেও নানা জটিলতায় তা বাতিল হয়েছে। আর টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে চুক্তি সম্পন্ন হলেও এখনও চালু হয়নি খালিশপুর জুট মিল।
আর্থিক ক্ষতির মুখে ২০২০ সালের জুলাইয়ে খুলনা অঞ্চলের ৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে চাকরি হারান স্থায়ী-অস্থায়ী প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক। পরবর্তী সময়ে পাটকলগুলোকে বেসরকারি খাতে ৫ থেকে ৩০ বছরের জন্য ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
২০০২২ ও ২০২৩ সালে বেসরকারি উদ্যোগে চালু হয় খুলনার দৌলতপুর, ইস্টার্ন এবং যশোরের জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিল। এর মধ্যে জেজেআই জুট মিল কিছুটা ভালোভাবে চললেও বাকি মিলগুলো উৎপাদন করছে সক্ষমতার এক চতুর্থাংশ। সর্বসাকুল্যে চাকরি হয়েছে হাজার দুয়েক শ্রমিকের। যা নিয়ে ক্ষোভের শেষ নেই শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্টদের।
শ্রমিক নেতা খলিলুর রহমান বলেন, ‘বেসরকারিভাবে পাটকলগুলো চালু হওয়ায় শ্রমিকদের কোনো লাভ হচ্ছে না। ইজারা নেওয়া নতুন মালিকপক্ষ যে চারটি মিল চালু করেছে তাতে কর্মসংস্থান হয়েছে মাত্র দুই হাজার শ্রমিকের। অথচ একেকটি জুট মিলেই তিন হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করত। যেসব শ্রমিকের কাজ হয়েছে, তাদেরও বেতন দেওয়া হচ্ছে খুবই সামান্য। যদি বেসরকারিভাবে চালাতেই হয়, তাহলে শ্রমিকদের সরকারি সুযোগ-সুবিধা দিয়ে মিলগুলো চালাতে হবে।’
আরেক শ্রমিক নেতা দীন মোহাম্মদ বলেন, মিল যখন বন্ধ করা হয় তখন বলা হয়েছিলো, এটা সাময়িক, তিন মাস পর সব মিল চালু হয়ে যাবে। কিন্তু প্রায় পাঁচ বছর হতে চললো মিলগুলোর সেই একই অবস্থা।
তিনি বলেন, ‘খুলনা অঞ্চলের পাটকলগুলোর শ্রমিকরা অন্য কোনো কাজ শেখেনি। ফলে তাদের অনেকটা মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা নেওয়ায় আমাদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। তবে এখন মনে হচ্ছে, তারাও কোনো ভূমিকা রাখছে না।’
যে কয়েকটি মিল চালু হয়েছে তাতে কর্মসংস্থান হয়েছে মাত্র হাজার দুয়েক শ্রমিকের। ছবি: সময় সংবাদ
এদিকে নতুন মালিকপক্ষের মনে করছে, পর্যায়ক্রমে পূর্ণ সক্ষমতায় চালু হবে মিল। এতে লাভের আশাও করছেন তারা।
দৌলতপুর জুট মিল ইজারা নেয়া ফরচুন গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার মো: ইসহাক আলী বলেন, এক বছর আগে যখন আমরা মিলটি চালু করি, তখন খুবই ভঙুর অবস্থায় ছিলো। মাত্র ১০টি তাত নিয়ে আমরা উৎপাদন শুরু করেছিলাম। এখন আমরা ৩০টির মতো তাত চালাই। আমাদের ইচ্ছা আছে, পর্যায়ক্রমে তাতের সংখ্যা বাড়াবো। এই জুট মিল থেকে আমরা লাভের মুখ দেখবো বলে আশা করি।
যদিও বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) বলছে, টেন্ডার আহ্বানসহ পর্যায়ক্রমে বেসরকারিভাবে চালু হবে সবগুলো মিল।
বিজেএমসির আঞ্চলিক সমন্বয় কর্মকর্তা গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘লিজ প্রক্রিয়ায় আমরা চারটি মিল চালু করেছি। এর মধ্যে জেজেআই খুব ভালোভাবে উৎপাদন করছে। অন্য তিনটি মিলও চালু আছে। তারা খুব বেশি উৎপাদন না করলেও মিলগুলোকে উৎপাদনমুখী রেখেছে। অন্যান্য মিল চালুর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। কোনোটি টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে, কোনোটি হস্তান্তরের অপেক্ষায় রয়েছে। আমরা আশা করি, দ্রুত সবগুলো মিল চালু হয়ে যাবে। বেসরকারিভাবে চালু হওয়া মিলগুলো দ্রুত লাভের মুখ দেখবে।’
বেসরকারি উদ্যোগে চালু হওয়া খুলনার চারটি মিলের মধ্যে জেজেআই মিলে প্রতিদিন ৬০ মেট্রিক টন পাট-পণ্য উৎপাদন হয়। বাকি তিনটি মিলে প্রতিদিন মোট উৎপাদন হয় ১২ টনের মতো। সময়।